গোয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় মমতা, তৃণমূলে যোগ দিলেন লিয়েন্ডার পেজ

মমতা ব্যাণার্জী ও লিয়েন্ডার পেজ

চিত্র তারকা থেকে খেলোয়াড়, শিল্পী—তৃণমূলের সদস্য সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কিন্তু এতদিন সেটা বাংলার গণ্ডিতেই আটকে ছিল। এবার তা গোয়াতেও ছড়িয়ে পড়ল। শুক্রবার মমতা ব্যাণার্জীর হাত থেকে পতাকা নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ।

লিয়েন্ডার বাংলায় জন্মালেও তাঁর সঙ্গে গোয়ার নাড়ির টান। পশ্চিম উপকূলের রাজ্যটির সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক। শুক্রবার পানাজির সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে লিয়েন্ডার বলেন, “দিদি আমায় যে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন তার জন্য আমি গর্বিত। এবার দিদি যেমন যেমন নির্দেশ দেবেন সেই অনুযায়ী কাজ করব।”

ক্রীড়াবিদ হিসেবে লিয়েন্ডারের সাফল্যের ঝুলিতে রয়েছে অনেক রেকর্ড। অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ রয়েছে তাঁর। তা ছাড়া ডাবলসে আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং মিক্সড ডাবলসে ১০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ভারতের খেলাধূলোয় সর্বোচ্চ সম্মান খেলরত্ন পেয়েছেন। কেন্দ্র তাঁকে পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, অর্জুন পুরস্কারেও সম্মানিত করেছে।

শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলনে মমতাকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলার ভোটে স্লোগান ছিল খেলা হবে। গোয়াতেও কি এই স্লোগান বহাল থাকবে? হাসতে হাসতে তিনি বলেন, "ভোটটা আসতে দিন না। দেখবেন ফুটবল নিয়ে আসব। আমি শুধু রাজনীতি করি না। ফুটবলও খেলতে পারি। শুধু ফুটবল নয়। ব্যাডমিন্টন, টেনিস--সব আছে।" এরপরেই লিয়েন্ডার বলেন, "দিদি যে ভাবে বাংলাকে বদলে দিয়েছেন, গোয়ার বদলের জন্য তাঁকেই দরকার।"

গোয়া বিধানসভা ত্রিপুরার থেকেও ছোট। এই রাজ্যে মোট বিধানসভা আসন ৪০টি। গত বার কোনও দলই একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস একা পেয়েছিল ১৭টি। বিজেপির ঝুলিতে ছিল ১৩টি আসন। বাকি দশটির মধ্যে তিনটি গোমন্তক পার্টি, তিনটি গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি, তিনটি নির্দল এবং একটি এনসিপি জিতেছিল। পরে নির্দলের মধ্যে থেকে একজন বিধায়ক যোগ দেন আম আদমি পার্টিতে।

বিধায়ক সংখ্যা কম হলেও বিজেপি যে একে একে বিধায়ক জোগাড় করে সরকার গড়ে তা নতুন নয়। গোয়ার পাশাপাশি মণিপুরেও একই ছবি দেখা গিয়েছিল। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে মমতা সেটাকে কংগ্রেসের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেসের "গা ছাড়া" মনোভাবের জন্যই বিজেপি পাঁচ বছর গোয়ায় সরকার চালানোর সুযোগ পেয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনেও দিদিকে প্রশ্ন করা হয়, অনেকে বলছেন তৃণমূলের গোয়ায় অনুপ্রবেশ আসলে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ করার ছক। এ ব্যাপারে মমতা কিছুটা রাগত স্বরেই বলেন, “কৈ অন্য দলকে তো এসব প্রশ্ন করেন না। অনেক দল তো গোয়ায় লড়েছে। তৃণমূল তো এবার এল। এত গাত্রদাহ কেন হচ্ছে।” তিনি বোঝাতে চান, বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে তৃণমূলের যে ধারাবাহিকতা তা কংগ্রেসের নেই।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূলের এখন লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় স্তরে সংখ্যার নিরিখে কংগ্রেসকে টপকে গিয়ে নেতৃত্বের ব্যাটন দিদির হাতে রাখা। ফিরহাদ হাকিম দু’দিন আগেই বলেছেন, "সিপিআই ভেঙে যদি সিপিএম তৈরি হতে পারে তারপর সেই সিপিএমের নেতৃতাধীন বামফ্রন্টের ছাতার তলায় যদি সিপিআই থাকতে পারে তাহলে তৃণমূলের নেতৃত্ব কংগ্রেসের মেনে নিতে আপত্তি কোথায়?"

কংগ্রেস নিয়ে ধারাবাহিক ভাবেই সমালোচনার সুর চড়াচ্ছিলেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক চার কেন্দ্রের উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়েও কংগ্রেস নিয়ে অন্তত ১০ মিনিট করে সময় খরচ করেছেন। শুক্রবার মমতাও বোঝাতে চাইলেন, বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেস তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ভরসা এখন তৃণমূলই।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “বিজেপির সঙ্গে কে আঁতাত করছে সাধারণ মানুষ জানেন। সিবিআই, ইডি থেকে বাঁচতে এখন ভোট ভাগাভাগি করতে গোয়ায় গিয়েছেন।”