রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস সম্পর্কিত সব ধরনের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গত ১৩ মার্চ জেনেভায় রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৪ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ অভিমত দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
অনুষ্ঠানে তিনি রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ইউএনএইচসিআর ও আইওএমসহ সব মানবিক সহায়তা সংস্থাকে অনুরোধ করেন। আর, দীর্ঘ দিনের রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্র সচিব মোমেন সতর্ক করে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে মৌলবাদ ও চরমপন্থার ঝুঁকি থেকে উদ্ভূত হুমকি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা-কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
“ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দায়িত্ব নিয়ে নীতি বাস্তবায়ন না করলে, শুধু বাংলাদেশ, ইউএনএইচসিআর, আইওএম ও ডব্লিউএফপির পক্ষে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য কার্যক্রম চালানো এবং সুরক্ষা দেয়া সম্ভব নয়;” উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
ক্রমবর্ধমান তহবিল সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের প্রতিশ্রুত অনুদান আরো বাড়ানোর আহবান জানান তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে। তা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ছয় বছর ধরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
“বাংলাদেশ এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সর্ববৃহৎ দাতা দেশ এবং ২০২২ সালেই ১৬০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে;” উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ওপর চাপ কমাতে, বিকল্প পথ অনুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি। বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রতি বছর ৩০ হাজার নবজাতক জন্ম নিচ্ছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একীভূত করার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউএনএইচসিআর এবং আইওএমসহ সকল মানবিক প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন তিনি।
এই বছর জেআরপিতে ১৯৫টি প্রকল্পের মাধ্যমে, রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ৮৫ কোটি ডলারের বেশি তহবিল চাওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন হবে এই সংকটের টেকসই সমাধান।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানান। এছাড়াও, তিনি রোহিঙ্গা ও নিজ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে, বিশ্বব্যাংকের আইডিএ ক্রেডিট তহবিল থেকে অনুদান ও ঋণ গ্রহণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।