বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বৈশ্বিক মন্দা ও নানামুখী চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও সরকার শ্রম-বান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনীয় শ্রম সম্পর্ক তৈরির জন্য সকল পদক্ষেপ নেয়া হচ্চে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ৩৫০তম গভর্নিং বডির অধিবেশনে এ কথা বলেন আনিসুল হক।
শ্রমজীবী মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে, বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত রোড ম্যাপ (২০২১-২৬) এর আলোকে চার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। এগুলো হলো; আইনগত সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম সংক্রান্ত পরিদর্শন এবং শ্রমিকদের অন্যান্য অধিকার। আইএলও অধিবেশনে এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেন আনিসুল হক।
প্রস্তাবিত বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন বিলে, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধনের জন্য শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে; আর, অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনা, ইউনিয়নের প্রতি অনায্য আচরণের শাস্তি দ্বিগুণ করা, বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করার শাস্তি তিনগুণ করা, শিশু শ্রমের শাস্তি চারগুণ করার বিধান রাখা হয়েছে বলে অধিবেশনে জানান আইনমন্ত্রী আসিনুল হক।
প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে এবং নৌ পরিবহন খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন ও পরিচালনা সহজীকরণ, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ে আপিল আবেদন সহজীকরণ সংক্রান্ত বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত এ সংশোধনীতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিভিন্ন কনভেনশনের অধিকতর প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে।
যথাযথ ত্রিপক্ষীয় আলোচনা শেষে, দ্রুততার সঙ্গে, সম্ভব হলে জাতীয় সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে, শ্রম আইনের এই সংশোধন বিল আকারে উপস্থাপিত হতে পারে বলে জানান আনিসুল হক।
তিনি আরো বলেন, কারখানা পরিদর্শক পদ আড়াই গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পরিদর্শন মডিউল চালু করা হয়েছে। এর ফলে, ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসে বিশ হাজারের বেশি পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে; অধিবেশনে জানান আনিসুল হক।
ইপিজেড গুলোতে নিজস্ব উন্নত পরিদর্শন ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ও পরিদর্শন শুরু করেছে বলে জানান তিনি। বলেন, “ছয়টি নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠার পর, এখন মোট ১৩টি শ্রম আদালত কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি সেল চালু করা হয়েছে; যা নিবন্ধিত ৯০ শতাংশের বেশি সালিশ আবেদনের নিষ্পত্তি করেছে।”
ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করতে এবং ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের প্রতি বৈষম্য বন্ধের লক্ষ্যে, সরকার গত তিন বছরে প্রায় ছত্রিশ হাজার শ্রমিক, ব্যবস্থাপক, মালিক, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে বলে জানান বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী।