পরীমনির বিরুদ্ধে মাদক মামলা বিচারিক আদালতে চলবে: হাইকোর্টের রায়

চিত্রনায়িকা পরীমনি।

বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলা বাতিল চেয়ে আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে রায় দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

এ রায়ের ফলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

আদালতে পরিমণির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না।

আইনজীবী জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, অ্যালকোহলের লাইসেন্স থাকায় এবং জব্দ করা অ্যালকোহল যথাযথ মাত্রায় থাকায় অ্যালকোহলের বিষয়টিতে বিচার হবে না। তবে এলএসডি ও আইস নামক দুটি মাদকের বিষয়ে বিচার চলবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৪ অগাস্ট রাজধানী ঢাকার বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সেসময় র‌্যাবের পক্ষ থেকে পরীমনির বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্য মাদকদ্রব্য জব্দের দাবি করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় পরীমনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। একই বছরের ৪ অক্টোবর আদালতে পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

অভিযোগ গঠনের পর মামলা বাতিল চেয়ে পরীমনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।

২০২২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলার কার্যক্রম পরীমনির ক্ষেত্রে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। রুলে পরীমনির ক্ষেত্রে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলার কার্যক্রম কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। ২০২২ সালের ৮ মার্চ চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করে।

২০২৩ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগ আদেশ দেন। আদেশে মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুল ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। এ সময় মামলার কার্যক্রম পরিচালনা না করতে বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে রুল নিষ্পত্তি না হলে বিচারিক আদালতে মামলাটির কার্যক্রম চলবে বলে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগের আদেশের পর হাইকোর্টে মামলা বাতিলের প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি হয়। ২০২৩ সালের ২৪ অগাস্ট শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট একই বছরের ১৯ অক্টোবর রায়ের জন্য দিন করেন। অবশ্য বেঞ্চ পুনর্গঠন হওয়ায় ধার্য তারিখে রায় হয়নি। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের ছাপা কার্যতালিকায় পরীমনির করা আবেদনটি ২২ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য আসে। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রায় দিলেন হাইকোর্ট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।