বিএনপির অভিযোগ: ‘ড. ইউনূসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে সরকার’

বিএনপির অভিযোগ: ‘ড. ইউনূসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে সরকার’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমান করেই ক্ষান্ত হয়নি সরকার; এখন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দখল করে নিয়েছে।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে এ কথা বলেন সেলিমা রহমান।তিনি বলেন, “জনগণ তাদের স্বৈরশাসন দেখছে এবং কীভাবে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠান জবরদখল করা হচ্ছে তা-ও দেখছে।”

“তাকে অপমান করেছে... এখন তার টেলিকম ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে দখল হয়ে গেছে;” যোগ করেন সেলিমা রহমান। বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরশাসন সর্বব্যাপী। “তারা দখলদারিত্বের নতুন নজির স্থাপন করেছে;” তিনি উল্লেখ করেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অভিযোগ করেন যে ক্ষমতাসীনরা ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত। তিনি বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনা আপনারা শুনেছেন। প্রতিদিন নারীরা কিভাবে নির্যাতিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে।”

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করেন সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, এদেশে এখন মায়েরা ধর্ষণ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। “ সর্বত্র অনিয়ম থাকার কারণে এসব অপরাধের কোনো প্রতিকার নেই;” তিনি বলেন।

সেলিমা রহমান আরো অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের রাজনীতিকরণের কারণে নির্যাতিত নারী ও নিপীড়িত মানুষ এখন জনগণের কাছ থেকেও সহযোগিতা পায় না; বিচার বিভাগের কাছ থেকেও বিচার পায় না।

সেলিমা রহমান বলেন যে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দাম সামাল দিতে মানুষ এখন কঠিন সময় পার করছে। তিনি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমাতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করেন।

বর্তমান সরকারকে 'ফ্যাসিবাদী' সরকার উল্লেখ করেন সেলিমা রহমান। এই সরকারের অবসান ঘটিয়ে, একটি গণমুখী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নামতে, জনগণের প্রতি আহবান জানান তিনি।

বিএনপি উগ্রবাদের উৎস, বললেন ওবায়দুল কাদের

এদিকে, বিএনপিকে উগ্রবাদের প্রধান উৎস বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। “বিএনপি উগ্রবাদকে লালন করছে এবং বেপরোয়া রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে; বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের আরো বলেন যে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উৎপত্তি হয়েছে বিএনপির মাধ্যমে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে 'বেপরোয়া চালকের' সঙ্গে তুলনা করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে চায়। আর, এটা তারা ঐতিহাসিকভাবে করে আসছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরের।

বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনা বাস্তব ইস্যু নেই। এটা তাদের হতাশাগ্রস্থ করেছে। আর, আন্দোলনে পরাজয়ের পর, এখন একটা ভিত্তি তৈরির চেষ্টা করছে বিএনপি।

আট প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অভিযোগ করেছেন, গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ টেলিকমসহ তার আটটি প্রতিষ্ঠান জোরপূর্বক দখল করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১ নম্বরে চিড়িয়াখানা সড়কে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের নিচতলায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “আমরা অনেক ধরনের দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাই, কিন্তু এমন বিপর্যয় আগে দেখিনি। হঠাৎ করে বাইরে থেকে কিছু লোক এসে আমাদের নিজেদের অফিস থেকে সরে যেতে বলে।”

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমরা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে আছি। … আমাদের আটটি প্রতিষ্ঠান জবরদখল হয়ে গেছে।”

তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের হয়ে আমরা গ্রামীণ টেলিকম ভবনটি বানিয়েছি। সেখানে আমাদের কর্মীরা নিয়মিত অফিস করছে, কাজকর্ম করছে। “হঠাৎ, চার দিন আগে (১২ ফেব্রুয়ারি) আমরা দেখি বহিরাগতরা আমাদের অফিস দখল করছে। আমরা তাদের কাছে বহিরাগত হয়ে গেলাম। তারা তাদের ইচ্ছানুযায়ী এটি চালানোর চেষ্টা করছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না এটা কীভাবে হলো।”

মুহাম্মদ ইউনূস জানান, বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েও তিনি প্রতিকার পাননি। তিনি বলেন, “আমার ঘর জবরদখল হয়ে যাচ্ছে। আমরা পুলিশকে জানিয়েছিলাম, একটা জিডি করেছিলাম। জিডির কপি নিয়ে পুলিশ এসেছিল, কিন্তু কোনো সমাধান দেয়নি। আমরা অফিস করতে পারছি না।”

কিছু লোক তাদের কার্যালয়ের সামনে ঝাড়ু নিয়ে মিছিল করেছে উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এর পেছনের কারণ তিনি বুঝতে পারছেন না। “আমরা কী হঠাৎ করে এমন একটি অবস্থানে পৌঁছেছি যেখানে আমাদের ঝাড়ু প্রাপ্য? আমরা নিজেদের জায়গায় আছি। আমরা আর অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।"

মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠিত সকল প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর একই ভবনে। “এই ভবনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ব্যবসার লাভ দিয়ে। এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রামীণ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কোনো কর্তৃত্ব নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই গড়ে ওঠেনি।”

গ্রামীণ টেলিকম ভবনে (১৩ তলা) মুহাম্মদ ইউনূসের ১৬টি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির চেয়ারম্যান তিনি। গ্রামীণ ব্যাংক যে আটটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেগুলো হলো—গ্রামীণ কল্যাণ; গ্রামীণ টেলিকম; গ্রামীণ শক্তি; গ্রামীণ সামগ্রী; গ্রামীণ ফান্ড; গ্রামীণ মৎস্য ও পশুসম্পদ ফাউন্ডেশন; গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন এবং গ্রামীণ উদ্যোগ। ১২ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, গ্রামীণ কল্যাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মাঈনুদ্দিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ডক্টর ইউনূসের জন্য স্বচ্ছ ও ন্যায্য বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর আপিল চলার সময় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর।

ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখে ভয়েস অফ আমেরিকাকে পাঠানো এক ইমেইল বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, "আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য করেছি, শ্রম আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে পরিচালিত হয়েছে।"

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অভিযোগপত্র জমা দেয়া সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন, "দুর্নীতি দমন কমিশন অতিরিক্ত মামলাগুলির জন্য একটি চার্জশিট অনুমোদন করেছে যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে।"

এ বিষয়ে অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মত যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বিগ্ন যে, "এই মামলাগুলি ড. ইউনূসকে হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশের শ্রম আইনের অপব্যবহার হিসাবে প্রতীয়মান হতে পারে।"

মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, "শ্রম ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশে আইনের শাসন জারি থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন জাগাতে ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।"

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানিয়েছেন যে, ড ইউনুসকে নিয়ে যে সব খবর আসছে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

জাতিসংঘে দৈনিক ব্রিফিং-এর সময় বাংলাদেশর একজন সাংবাদিক জানতে চান যে, গ্রামীণ অফিস দখল এবং ড, ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার নতুন যে সব অভিযোগ এনেছে, সে সম্পর্কে জাতিসংঘের মহাসচিব অবগত আছেন কীনা। এই প্রশ্নের জবাবে দুজারিক বলেন, “ আমরা বিষয়টি জানি।''

''আমি আবার জোর দিয়েই বলবো যে বহু বছর ধরে মি ইউনুস দাপ্তরিক ভাবে এবং দপ্তরের বাইরে থেকেও জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল, দ্য সাস্টনেবেল ডেভেলপমেন্ট গোল এবং সাধারণ ভাবে আমাদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ আমাদের অনেক উদ্যোগের প্রতি সমর্থন দিয়ে আসছেন।

''তাঁর বিষয়ে যে সব খবর আসছে সে সম্পর্কে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন,'' তিনি বলেন।