বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে তাঁর বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। রাত ১২টার দিকে বাসায় ফিরেছেন তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিটের দিকে গুলশানের বাসা থেকে হাসপাতালে আসেন এবং সেখানে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করেন।
শায়রুল কবির খান বলেন, মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে খালেদা জিয়ার বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়া পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে রাত ১২টার দিকে তাঁর বাসায় পৌঁছান।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এর আগে গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছিল।
“তিনি (খালেদা জিয়া) হাসপাতালে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা করেছেন,” বলেন জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এর আগে ২০২৩ সালের ৯ অগাস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে এ বছরের ১১ জানুয়ারি বাসায় ফেরেন তিনি। এরপর থেকে তিনি তাঁর গুলশানের বাসায় মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি বৃদ্ধি এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ২৬ অক্টোবর ট্রান্সজুগার ইন্ট্রাহেপাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শন্ট (টিআইপিএস পদ্ধতি) নামে পরিচিত হেপাটিক পদ্ধতি সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মেডিসিনের চিকিৎসক হামিদ রব, ক্রিস্টোস জর্জিয়াডেস ও জেমস পি এ হ্যামিল্টন ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে টিআইপিএস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন চিকিৎসকেরা।
বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারও বিভিন্ন সময় সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজা স্থগিত করে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে পুরান ঢাকার কারাগারে পাঠানো হয়। পরে একই বছর দুর্নীতির আরেকটি মামলায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গুলশানের বাসায় অবস্থান এবং দেশ ত্যাগ না করার শর্তে সরকার ২০২০ সালের ২৫ মার্চ এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে একাধিকবার জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।