পুলিশের বাধায় ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল করতে পারেনি বিএনপি

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে ডাকা ৭ম দফা অবরোধ। ২৬ নভেম্বর, ২০২৩। ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর সাতটি পয়েন্টে কালো পতাকা মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিলো। রাজপথে কর্মসূচি পালনের অনুমোদন নেই উল্লেখ করে বিএনপিকে মিছিল বের করতে দেয়নি পুলিশ।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করার কথা ছিলো বিএনপি ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর।

বিএনপির ভাষায়, অবৈধ ডামি সংসদ বাতিলের দাবিতে, রাজধানীর পীরজঙ্গী মাজার, যাত্রাবাড়ীর কদমতলী বাস স্টেশন, নিউমার্কেট ও দয়াগঞ্জ মোড়ের সামনে কালো পতাকা মিছিল করার কথা ছিলো ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির।

আর, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি প্রস্তুতি নিয়েছিলো, শাহজাদপুরের সুবাস্তু নজর ভ্যালি শপিং মল, উত্তরা সেকশন-১২ কবরস্থান ও মিরপুর-৬- এর একটি মসজিদের সামনে থেকে কালো পতাকা মিছিল করার।

বিএনপির নেতাকর্মীরা কালো পতাকা নিয়ে সাতটি স্পটে সববেত হতে শুরু করলে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই কর্মসূচির অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়।

এদিকে, বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে যোগ দিতে দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেকশনের কবরস্থানের কাছে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

ড. মঈন সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং তাকে একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। পরে বিএনপি নেতাকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে চড়ে গুলশানের বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “মঈন খানকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। আমরা তাকে থামিয়েছি।”

“আমরা তাকে কালো পতাকা মিছিলে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছি;” যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাহউদ্দিন বলেন, “কোনো অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিলো দলটি।”

তিনি বলেন, বিএনপি কর্মসূচি পালনের জন্য ডিএমপির কাছে অনুমতি চেয়েছিলো। কিন্তু নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি। “এ কারণে আমরা তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেইনি;” বলেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাহউদ্দিন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে ৮ থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায় বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে এবং কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার যান, তবে মিছিল করতে পারেননি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো জানান, “রাজধানীর ৭টি স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আমরা ডিএমপির পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু, পুলিশ সব জায়গায় আমাদের বাধা দিয়েছে। আমরা পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

“সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না;” যোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জানান, পুলিশের উপস্থিতির মধ্যে কর্মসূচি পালনের জন্য নেতাকর্মীরা মিছিলস্থলের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করেন। কবে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সংঘাতে জড়ানো তাদের উদ্দেশ্য নয় বলে তিনি জানান।

একপর্যায়ে দলের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যাওয়ায় গয়েশ্বর নিজের গাড়িতে করে এলাকা ত্যাগ করেন।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিএনপি কর্মসূচি পালনের অনুমতি পায়নি।”