আর্থিক খাতের সংস্কারের পাশাপাশি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনেএ কথা বলেন তিনি। বলেন, “ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। আর, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে, তার প্রভাব আমাদের ওপরও পড়বে।”
এর আগে রাষ্ট্রপতি মাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের প্রথম সংসদ অধিবেশন আহ্বান করেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংসদ গঠিত হয়েছে।
আসন্ন বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায়, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে, কৃষি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শস্য গুদাম ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়ন সাধনে মনোযোগ দেয়ার আহবান জানান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
“রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তির জন্য দ্বিপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি সই ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন;” যোগ করেন তিনি।
জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদারের আহবান জানান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। “দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি দক্ষ শ্রমশক্তি রফতানি করতে, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান করা জরুরি;” বলেন তিনি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাহাবুদ্দিন বলেন, একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের শান্তিপূর্ণ ধারাকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।
“তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড, জনগণকে সাময়িক উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে; তবে, গণতন্ত্রের চেতনা, মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখতে পারেনি;” বলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের গৃহীত সকল পদক্ষেপ ও গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে সুফল বয়ে এনেছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা দলগুলো নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।
রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সহিংসতা ও নৈরাজ্য পরিহার করবে এবং সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায়, জনগণের কল্যাণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে, অহিংস ভাবে গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে।
সরকারও এ বিষয়ে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অধিবেশনের শুরুতে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন; রাষ্ট্রপতি তাদের শপথ পাঠ করান।
এর আগে, আওয়ামী লীগরে সংসদীয় দল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে তাদের আগের পদে মনোনয়ন দেয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ফল ঘোষণা করা হয়েছে ২৯৯টির। এর মধ্যে ২৯৯ আসনে জয়লাভ করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।
আর, জাতীয় পার্টি ১১ আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটি ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৬২ জন সংসদ সদস্য হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৮ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা।