বাংলাদেশের রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায়, ৬ ও ৭ জানুয়ারি ৩২টি ট্রেনের চলাচল স্থগিত করা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ৩২টি ট্রেনের মুভমেন্ট কম। আর রেলপথের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেসের বগি পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
রেলওয়ে মহাপরিচালক বলেন, “দিনের বেলায় মুভমেন্ট কম থাকে এমন পূর্বাঞ্চলের ২০টি এবং পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি ট্রেন এই দুই দিন চালাচ্ছি না। আপাতত এগুলো ছাড়া বাকি সব ট্রেন চলাচল করবে।”
কেন ৩২টি ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে জানতে চাইলে কামরুল আহসান বলেন, যাত্রী চলাচল কম থাকার কারণে এই ট্রেনগুলো স্থগিত করা হয়েছে। এসব ট্রেনে যে কর্মচারী আছে তারা অন্যান্য ট্রেনে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
“নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে আমাদের লোকোমোটিভ দিয়ে রেললাইনের নিরাপত্তা দেখবো। পুরো কাজটি করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করার জন্য” যোগ করেন রেলওয়ের মহাপরিচালক
বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। পাশাপাশি, পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা বিষয়টি দেখছে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটা নাশকতামূলক কার্যক্রম। তবে চূড়ান্ত করে বলা যাবে না।”
ক্ষতি সম্পর্কে তিনি জানান, ট্রেনের দুটি বগি একেবারে পুড়ে গেছে এবং পাওয়ার কার আংশিক পুড়ে গেছে। এটি পরিষ্কার করার পর বুঝতে পারা যাবে কতটুকু ক্ষতি হয়েছে।
কামরুল আহসান বলেন, রেলওয়ে নাশকতা ঠেকাতে চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন স্টেশন থেকে সিসিটিভি ফুটেজ এবং ট্রেনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজ নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
“আমরা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে সিসি ক্যামেরা চালু করেছি, পর্যায়ক্রমে সবকটি ট্রেনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে;” জানান রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান।
এর আগে জানানো হয়েছিলো যে বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ দেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ২১টি ট্রেনের যাত্রা দুই দিনের জন্য স্থগিত করেছে।
বেনাপোল স্টেশন ম্যানেজার শাহিদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, “অনিবার্য কারণবশত শনিবার ও রবিবার বেনাপোল এক্সপ্রেস ও ঢালারচর এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে।”
পাশাপাশি মহানন্দা আপ ও ডাউন, রকেট আপ ও গাউন, পদ্মরাগ ২১/২২, রংপুর শাটল ৯৭/৯৮, ঢাকা কমিউটার- ৯৯, রাজশাহী কমিউটার ৫/৬ ও বগুড়া কমিউটার ৫/৬ শনিবার ও রবিবার বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া চিলমারী কমিউটার এবং লোকাল (৪৬২/৪৫৫/৪৫৬/৪৬১) শনিবার আংশিক চলবে এবং রবিবার পুরোপুরি বন্ধ থাকবে।
নিহত ৪ জন
এর আগে, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে ট্রেনটির অন্তত ৫টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এসময় দগ্ধ হয়ে অন্তত চার যাত্রীর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সংস্থাটির সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্তণে কাজ শুরু করে। রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানান, গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ৫টি বগিতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এতে পাঁচটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম।
ফায়ার সার্ভিসের আরেক মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ট্রেনটির কয়েকটি বগিতে আগুন দেয় ধরিয়ে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।