বাংলাদেশর রাজধানী ঢাকা গোপীবাগে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
এ আগুনের ঘটনায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে এক বিএনপি নেতাসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ-উদ-দৌলা খান জানান, বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি অগ্নিকাণ্ডের কারণ চিহ্নিত করে, এর দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ করবে।
কমিটির প্রধান হলেন, বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী মো. সৌমিক শাওন কবির। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে
নিহত ৪ জন
এর আগে, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনে ট্রেনটির অন্তত ৫টি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এসময় দগ্ধ হয়ে অন্তত চার যাত্রীর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সংস্থাটির সাতটি ইউনিট আগুন নিয়ন্তণে কাজ শুরু করে। রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার জানান, গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ৫টি বগিতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এতে পাঁচটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।
চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তালহা বিন জসীম।
ফায়ার সার্ভিসের আরেক মিডিয়া কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ট্রেনটির কয়েকটি বগিতে আগুন দেয় ধরিয়ে দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য জানান।
বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তিনি আরো জানান যে, ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নবীউল্লাহ এবং আরো পাঁচজন প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
ডিবি প্রধান বলেন, “অগ্নিসংযোগের আগে বিএনপির ১০-১১ জন নেতা-কর্মী ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তারা সবাই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।”
ট্রেনে আগুন প্রসঙ্গে বিএনপি
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। বলেছে, “সরকার বিরোধী দলকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য আগুন নিয়ে খেলছে।”
শনিবার (৬ জানুয়ারি) হরতালের সমর্থনে অনুষ্ঠিত এক মিছিলে এ কথা বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সকাল ৬ টা থেকে ৪৮ ঘন্টার এই হরতাল শুরু হয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকার আবার আগুন নিয়ে খেলা শুরু করেছে। তারা একতরফা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অতীতের মতো পুরানো খেলায় মেতে উঠেছে।”
রিজভী দাবি করেন, এর আগেও ক্ষমতাসীন দল অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, “বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ড ও হতাহতের ঘটনা সরকারের পুরানো খেলার অংশ বলে জনগণ বিশ্বাস করে।”
রিজভী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীনরা সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়ে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী দেশের মতো নির্বাচন আয়োজন করতে, সরকার একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে, আর দায় চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর।
আবদুল মোমেনের প্রতিক্রিয়া
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ট্রেনে আগুন দেয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তারা কোনো প্রচেষ্টা বাদ দেবেন না।
শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং অপরাধীকে দেশের আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে।”
মোমেন উল্লেখ করেন যে জনগণের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির এই অপচেষ্টা গণতন্ত্রের চেতনা ও আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশি নাগরিকদের উৎসাহী অংশ গ্রহণের প্রতি অপমানস্বরূপ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ফাইল ছবি।
তিনি বলেন, “সহিংসতার এই ধরণ আমরা আগেও দেখেছি। যা আমাদের সমগ্র সমাজের বিবেককে এবং অবশ্যই সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করেছে।”
আব্দুল মোমেন উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জনগণ যখন উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দুর্বৃত্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, বিদ্বেষপূর্ণ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিত এই নিন্দনীয় ঘটনা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কেন্দ্রে আঘাত করেছে।
আব্দুল মোমেন আরো বলেন, নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে এই ঘটনা, দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উৎসব, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বাধাগ্রস্ত করার চূড়ান্ত অভিপ্রায়ে ঘটানো হয়েছে।
এই ঘটনাকে গণতন্ত্রের অপমান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আক্রমণ এবং নাগরিক অধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন।