আব্দুল মঈন খান: ‘প্রহসনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না‘

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪।

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, প্রহসনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, (২০২৩ সালের) ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে দমন-পীড়ন চালিয়ে সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, “জনগণ আমাকে জিজ্ঞেস করে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আমরা কী করব? আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই সরকারকে বুঝতে হবে, ২০২৪ ও ২০১৪ একই নয়। এবার এমন হবে না যে, তারা (সরকার) ভুয়া ও বিদ্বেষমূলক নির্বাচন করে আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করবে।”

বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য তাদের রক্ত দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি রাজপথে বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড মোকাবিলা করে দেশের ১৮ কোটি মানুষের জন্য গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।

আব্দুল মঈন খান বলেন, প্রার্থীরা যেদিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সেদিনই একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। “কে কোন আসনে এমপি হবেন তা সরকার এরই মধ্যে ঠিক করে দিয়েছে।”

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ভুয়া নির্বাচনের ভুয়া ফলাফল নিয়ে একদলীয় সংসদ ও সরকার গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “নির্বাচনের নামে তারা প্রহসন ও নাটক করছে। দেশের বাইরের সব নামকরা গণমাধ্যম এক বাক্যে বলছে, বাংলাদেশে যে নির্বাচন হচ্ছে তা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ বর্তমান সরকার এর মাধ্যমে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়।”

আব্দুল মঈন খান বলেন, তাদের দল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে চায়।

তিনি বলেন, “বিএনপি সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা কখনই সংঘাতের রাজনীতি এবং অস্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশে পরিবর্তন আনুক, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করুক।”

এ ছাড়া, সকালে রাজধানীর মতিঝিলের এজিবি কলোনি বাজারে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ৭ জানুয়ারি জোরপূর্বক একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “এই একতরফা ডামি নির্বাচনকে না বলার জন্য আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ৭ জানুয়ারি কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আমরা তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি।”

রিজভী বলেন, সরকার আরও লুটপাট ও দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নির্বাচন আয়োজন করছে।

ওবায়দুল কাদের: '৭ জানুয়ারি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ভালো নির্বাচনের সাক্ষী হবে বিশ্ববাসী'

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেই নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ৩ জানুয়ারি, ২০২৪।

তিনি বলেন, যেখানেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেখানেই নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা তাদের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে আছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিশ্ববাসী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে একটা ভালো নির্বাচন প্রত্যক্ষ করবে। যেখানে জনমত বিজয়ী হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি-জামায়াত এখন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে লিফলেট বিতরণ করছে। তারা ব্যর্থতা ও ভুলের চোরাবালিতে আটকে গেছে। এখান থেকে তারা বের হতে পারছে না। তাদের নেতিবাচক কর্মসূচি, নাশকতা, অবরোধ জনগণ অগ্রাহ্য করেছে। বিএনপি সহিংসতা করবে না বললেও সেটা সত্যি কথা কি না সেটা বলার সুযোগ নেই। কারণ তারা বলে একটা, করে আরেকটা। খবর পাচ্ছি তারা ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র করছে।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দ্বিমুখী ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ড. ইউনুসের মামলার রায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানবিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে সে বিষয়ে কেন কথা বলছে না। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলেনি।