বিএনপি: ৩৬ ঘন্টার অবরোধে স্বাভাবিক ঢাকার সড়ক

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৩৬ ঘন্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৩৬ ঘন্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধে, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা সত্ত্বেও, ঢাকার সড়কে গণপরিবহন ও যাত্রীদের উপস্থিতি স্বাভাবিক।

অবরোধ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায়, শেষ হবে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায়।

গত ৩১ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা এটি ১১ দফায় অবরোধ কর্মসূচি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের প্রতিবাদে এই অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে এবং ঢাকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে তাদের মোতায়েন করা হয়েছে।

অগ্নিসংযোগ

অবরোধের আগে, সোমবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানী ঢাকার টিকাটুলি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় দু’টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন জানান রাত সাড়ে ৮টার দিকে মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় ২ জনকে আটক করা হয়েছে বল জানান তিনি।

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৩৬ ঘন্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ।

মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে অবরোধ শুরুর পর, ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। গুলিস্তান পুলিশ বক্সের সামনে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের (মিডিয়া সেল) গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টা ১৮ মিনিটে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

এর আগে,সকাল ১০টার দিকে গুলিস্তান এলাকায় বাহন পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

২৪ ঘণ্টায় ৭টি অগ্নিসংযোগ

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের (মিডিয়া সেল) গুদাম পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৩৬ ঘন্টার সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধ।

তিনি জানান, এ সময় ৬টি বাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয়া হয়। ঢাকা শহর, আশুলিয়া ও ফেনী জেলায় এই অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ঘটেছে।

বিজিবি ও র‍্যাবের টহল দল মোতায়েন

বিএনপির অবরোধের কারণে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে ১৫২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
বিজিবির পাশাপাশি, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ৪২২ টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৩০টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে।

সহিংসতা ও নাশকতা রোধে বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গোয়েন্দা দল নজর রাখছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।