বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু হয়েছে রবিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে। নবম দফার এই অবরোধ চলবে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।
আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে, বিরোধী দলগুলো অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। অবরোধের সময় অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং রাস্তার কর্মসূচিতে জনসাধারণের কম উপস্থিতি রয়েছে।
আগের অবরোধের মতো এবারো ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি বেশি।তবে, গণপরিবহনের সংখ্যা পর্যাপ্ত। উত্তেজনা ও অগ্নিসংযোগের আশঙ্কা সত্ত্বেও জনসাধারণকে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। ঢাকার রাস্তায় আধিপত্য বিস্তার করেছে রিকশা । বেশকিছু ব্যক্তিগত যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে।
কর্মসূচি ঘোষণার সময় বিএনপির পক্ষ থেকে গানানো হয় যে গণমাধ্যমের যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ওষুধ বহনকারী যানবাহন এ অবরোধের আওতাবহির্ভূত থাকবে।
এদিকে শনিবার (২ ডিসেম্বর) মধ্যরাতের দিকে, ঢাকায় দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। গাবতলীতে রাত ১১টা ৯ মিনিটে পদ্মা লাইনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের (মিডিয়া সেল) উপ-সহকারী পরিচালক শাহজাহান শিকদার জানান, গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসে আগুন দেয়া হয়। এছাড়া রাত ১১টার দিকে আগারগাঁও বেতার ভবনের সামনে ভূঁইয়া পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।ফায়ার সার্ভিস ইউনিটগুলো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় রবিবার (৩ ডিসেম্বর) অবরোধচলাকালে একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হলে ট্রাকটি পুড়ে যায় এবং চালক দগ্ধ হন। তাৎক্ষণিকভাবে চালকের পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয় লোকজন চালক ও তার সহকারীকে পোড়া ট্রাক থেকে উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হলে ট্রাকটি পুড়ে যায় এবং চালক দগ্ধ হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার ইফতেখার চৌধুরী জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলায় রবিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চলন্ত একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়।
বিজিবি ও র্যাবের টহল দল মোতায়েন
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারাদেশে ১৬২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। রবিবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে বিজিবি সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, সারা দেশে ২৩০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ২৬ নভেম্বর, ২০২৩।
তিনি জানান, যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ২৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অবশিষ্ট প্লাটুন অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজিবি প্লাটুন এর পাশাপাশি সারাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৪৩৫টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪১টি টহল দল মোতায়েন করা হয়েছে। র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরান খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে র্যাব।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে।
এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।