দুবলার চরে ৩ দিনের রাস উৎসব শুরু শনিবার, শেষ হবে পুণ্যস্নানে

দুবলার চরে ৩ দিনের রাস উৎসব শুরু শনিবার, শেষ হবে পুণ্যস্নানে

বঙ্গোপসাগরের মোহনায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে অবস্থিত দুবলার চরে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হচ্ছে শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে। ইতোমধ্যেই সাগর তটে রাস উৎসবকে ঘিরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তবে, শুধু সনাতন ধর্মালম্বীরা অংশ নিতে পারবেন রাসপূজা ও পুণ্যউৎস্নানে। আর, রাস উৎসবে থাকছে না কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা মেলার আয়োজন।

রাস উৎসবকে ঘিরে, শনিবার থেকে সোমবার (২৭ নভেম্বর), এই তিন দিন সুন্দরবনে পূণ্যার্থী ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি দেয়া বন্ধ করেছে বন বিভাগ। পূণ্যার্থীরা নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন। আর ফিরেও আসতে হবে একই রুট দিয়ে। সব পূণ্যার্থীর অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে।

এদিকে, রাস উৎসব ঘিরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে সেখানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন বিভাগের বেশ কয়েকটি টিম বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল শুরু করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, “সরকার নির্ধারিত রাজস্ব জমা দেয়ার পর, বন বিভাগ থেকে পাস (অনুমতি) নিয়ে নির্ধারিত পাঁচটি রুট দিয়ে পূণ্যার্থীরা রাস উৎসবে যেতে পারবেন এবং একই রুট দিয়ে তাদের ফিরতে হবে।”

তিনি আরো জানান, “পূণ্যার্থীরা শনিবার দুবলার চরে পৌঁছাবেন, রবিবার সন্ধ্যায় রাসপূজা এবং সোমবার ভোরে পুণ্যস্নান শেষে আবার ফিরে আসবেন”

কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, “এই তিন দিন সুন্দরবনে পূণ্যার্থীছাড়া অন্য সব ধরনের মানুষের প্রবেশে অনুমতি দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে ১৬টি টিম গঠন করা হয়েছে। টিমের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে।”

যেসব রুট দিয়ে পূণ্যার্থীরা রাস উৎসবের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন সেগুলো হলো; ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন ত্রিকোনা আইল্যান্ড হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে দুবলার চর। বুড়িগোয়ালিন, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদীর পর দুবলার চর।

এ ছাড়া, কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা এরপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর এবং নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর যাওয়া যাবে।

বন বিভাগ জানায়, শনিবার সকালের ভাটায় পূণ্যার্থীরা সুন্দরবন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব জমা দিয়ে নির্ধারিত রুট দিয়ে লঞ্চ ও ট্রলার নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করবেন। রবিবার সন্ধ্যায় পূজা-অর্চনা শেষে সোমবার ভোরে সাগরের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে তিন দিনের রাস উৎসব। সন্ধ্যার মধ্যে পূণ্যার্থীরা ফিরে আসবেন। কোনো অবস্থাতেই কোনো পূণ্যার্থী আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না।

বন বিভাগের তথ্য মতে, প্রতি পুণ্যর্থীকে তিন দিনের জন্য ৭৫ টাকা, নিবন্ধন যুক্ত প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ৩০০ টাকা, নিবন্ধনবিহীন প্রতিটি ট্রলারের (তিন দিন) জন্য ১ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ট্রলারের অবস্থান ফি (প্রতিদিন) ৩০০ টাকা রাজস্ব দিতে হবে।

দুবলার চরে রাস উৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বসু সন্তু জানান, সরকারের নির্দেশনা মেনে সেখানে রাসপূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। তিনি আরো জানান, “শনিবার সকালের ভাটার সময় পূণ্যার্থীরা লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা নিয়ে দুবলার চরে রওনা হবেন। লোকালয় থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে দুবলার চরে বিকালের মধ্যে তারা পৌঁছে যাবেন। ১০ হাজার এবার রাস উৎসবে পূণ্যার্থী যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।”

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান জানান, “দুবলার চরে রাস উৎসবকে ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পূণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের সব সিদ্ধান্ত মানতে হবে।”

বাগেরহাট জেলার ডেপুটি কমিশনার মোহা. খালিদ হোসেন জানান, “দুবলার চরে রাস উৎসবে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অংশ নিতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে পূণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে। শুধু রাসপূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে।”

তিনি আরো জানান যে মেলা বা কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা কীর্তন গান করা যাবে না। রাসের এই আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে কোনো অবস্থাতেই সেখানে প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না বলেও জানান ডেপুটি কমিশনার খালিদ হোসেন ।