বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জেরে আদালত অবমাননার মামলায় বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (২২ নভেম্বর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁর উপস্থিতিতে সাজার এ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছেন, হাবিবুর রহমান দেশের জনগণের কাছে ভুল মেসেজ দিয়েছেন। বিচার বিভাগকে তিনি হেয় করেছেন। এই অবস্থায় আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন না। কোর্টকে কবর দেওয়া মানে দেশকে কবর দেওয়া, বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ।
হাবিবুর রহমান হাবিবের পক্ষে আদালতে আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী ফজলুর রহমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী কামরুল ইসলাম সজল, আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান প্রমুখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।
এর আগে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ বুধবার দুপুরে তাঁকে হাইকোর্টে হাজির করে।
টকশোতে হাবিবুর রহমান হাবিব যে বক্তব্য দিয়েছিলেন শুনানির শুরুতে ল্যাপটপের মাধ্যমে তা আদালতকে দেখানো হয়।
এ সময় আদালতের প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান হাবিব আদালতকে বলেন, আমি শপথ করে বলছি আমি এই বক্তব্য দিয়েছি। আমি আদালতের কাছে কিছু কথা বলতে চাই। তখন হাইকোর্ট তাঁকে কথা বলার অনুমতি দেন।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন বিপন্ন। আমি তাঁর জন্য আমার লিভার প্রয়োজনে দিয়ে দেব। খালেদা জিয়া এক মহীয়সী নেত্রী। তিনি আমার মা। আমার মাকে যদি কেউ কটু কথা বলে সে মারা গেলেও তো তাকে ছাড়ব না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভক্ত। তিনি বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় জাগরণ সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, আমার মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমার লিভার, কিডনি, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি। আমার ১০০ বছরের সাজা হলেও আমি ভয় পাই না।
এর আগে ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তাঁর ব্যাখ্যা দিতে হাবিবুর রহমান হাবিবকে তলব করেন হাইকোর্ট।
৬ নভেম্বর তাঁকে হাজির হতে বলা হয়। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
ওই আদেশ অনুযায়ী ৬ নভেম্বর আদালতে হাজির হননি তিনি। ফলে ৮ নভেম্বরের মধ্যে তাঁর বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে এ তথ্য জানাতে বলা হয়।
৮ নভেম্বরও আদালতের তলবে হাজির না হওয়ায় হাবিবকে হাইকোর্টে হাজির করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁকে হাজির করতে পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এর পর মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার পল্লবী থানার মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
উল্লেখ্য, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।