আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) সভাপতি ও সিইও স্টিফেন লামারকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। চিঠিতে তিনি দায়িত্বশীল ক্রয় অনুশীলনের ক্ষেত্রে এএএফএ’র সমর্থন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন।
চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন ও মসৃণ কার্যক্রম নিশ্চিত করতে, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে যেসব পণ্য পাঠানো হবে, সেগুলোর মূল্য যথাযথভাবে সমন্বয় বা মজুরির হার বৃদ্ধি করা জরুরি।”
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) পোশাক, জুতা ও অন্যান্য সেলাই পণ্য প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সরবরাহকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এখন থেকে নতুন ন্যূনতম মজুরি নীতিমালা মেনে, সব ধরনের ব্যবসায়িক সমঝোতা ও চুক্তি করতে হবে।” তিনি বলেন, “আমি বিনীতভাবে এএএফএ সদস্যদের, তাদের বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের সঙ্গে যথাযথ সহানুভূতি ও বিবেচনা-সহ সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি।”
ফারুক হাসান বলেন, “আমাদের নেয়া প্রতিটি প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে, আমরা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের পরিপূরক হতে চাই; ব্যবসার জন্য আরো অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধি ও দক্ষতাকে সমর্থন করে উন্নত অবকাঠামো ও নীতি তৈরিতে সরকারের করা উন্নতি ও অগ্রগতি আপনারা অনুসরণ করছেন। আমি নিশ্চিত, আপনাদের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।”
লামারকে লেখা চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “গত ৭ নভেম্বর সরকার গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ২০২৩ সালের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার প্রতিনিধিসহ অংশীজনদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরামর্শ ও সম্মতিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “নতুন ন্যূনতম মজুরি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব অর্থনীতি অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতিও অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে এই সংকটের প্রভাব পড়ছে, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পরিবহনসহ আমাদের সব অভ্যন্তরীণ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।”
তিনি লিখেছেন, “আপনারা জানেন, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক মানের কর্মক্ষেত্র হিসেবে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শিল্প খাতকে বিশাল বিনিয়োগ করতে হয়েছে; আর, যা আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে করেছি।”
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এখন বৈশ্বিক জলবায়ু অ্যাকশন এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে, আমাদের কারখানাগুলো জিএইচজি নির্গমন হ্রাস এবং আরও দক্ষ জনশক্তি বাড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, শ্রমিকদের স্বাচ্ছন্দ্য ও ক্লান্তি কমানোর জন্য কারখানাগুলো মেশিন, পদ্ধতি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করছে।”
ফারুক বলেন, “এই সমস্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে, বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য, টেকসই এবং সর্বাধিক পছন্দসই সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই সমস্ত উদ্যোগ ও বিনিয়োগ গুলো আপেক্ষিক ও নিরঙ্কুশভাবে ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে।”
তিনি বলেন, “এখন ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির মাধ্যমে, এই শিল্প প্রতিযোগিতা বজায় রেখে শ্রমিকদের উন্নত জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে। নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হলে, কারখানাগুলোর ওপর ব্যাপক আর্থিক প্রভাব পড়বে। বর্তমান অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতিতে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা আমাদের অনেক কারখানার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।”
ফারুক বলেন, “শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করা তাদের পাশাপাশি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যেহেতু আমরা নতুন ন্যূনতম মজুরি কাঠামো গ্রহণ করেছি, তাই আমরা এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবো এবং দায়িত্বশীল ক্রয় অনুশীলনের ক্ষেত্রে আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রয়োজন।"