বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী ৩ দিনের অবরোধের দ্বিতীয় দিন (বুধবার) সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে চলছে।
রাজধানী ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় সকাল ৮টার দিকে দুর্বৃত্তরা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিল নিয়ে একদল পিকেটারকে মালিবাগের দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। আবুল হোটেলের কাছে পৌঁছালে তারা একটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন।
পুলিশের একটি টহল দল পিকেটারদের ধাওয়া করে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। ধাওয়া করা হলে পিকেটাররা ঘটনাস্থল থেকে একটি গলি দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
নাশকতা এড়াতে রাজধানী ঢাকার মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখা গেছে।
বুধবার সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় বাস, সিএনজিচালিত ৩ চাকার গাড়ি ও প্রাইভেট গাড়ি দেখা গেছে।
সাভারের বালিয়ারপুর তুরাগ এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০-২৫ জনের একদল যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, এক পর্যায়ে তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দীপক চন্দ্র বলেন, পুলিশ তাদের ধরার চেষ্টা করছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা বিরোধী দলগুলোর দেশব্যাপী ৩ দিনের সড়ক-রেল-নৌপথ অবরোধের প্রথম দিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, যানবাহন পোড়ানোসহ সহিংসতায় কিশোরগঞ্জে ২ জন ও সিলেটে ১ জন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ শেষ হবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায়।
ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসে ককটেল হামলা
পাবনার ঈশ্বরদীতে কলকাতাগামী চলন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনে ককটেল হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
এতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের বগির একটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হয়নি
বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের অদূরে ঈশ্বরদী গার্লস স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে কলকাতাগামী চলন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস।
স্থানীয়রা জানায়, কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা মৈত্রী এক্সপ্রেস ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন অতিক্রম করে ঢাকা যাচ্ছিল। ঈশ্বরদীর লোকোসেড এলাকা অতিক্রম করার সময় ট্রেন লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে অবরোধকারীরা।
ঈশ্বরদী রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুজ্জামান রুমেল জানান, কে বা কারা মৈত্রী এক্সপ্রেস লক্ষ্য করে কিছু একটা ছুঁড়ে মারে। এতে ট্রেনের বগির জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ হতাহত হয়নি। ট্রেনটি নির্দিষ্ট সময়ই ছেড়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে আগুন জ্বালানোর আলামত পাওয়া গেছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন-অর্থ) মাসুদ আলম বলেন, ট্রেন লক্ষ্য করে দুটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ট্রেনের একটি গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া, কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
ঢাকার কাফরুলে বাসে আগুন
রাজধানী ঢাকার কাফরুল থানার পাশে ইতিহাস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ঘটনার পর পরই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
মুগদায় বাসে আগুন
ফায়ার সার্ভিসের সূত্র বলছে, রাজধানী ঢাকার মুগদা এলাকায় আইডিয়াল স্কুলের সামনে ৩ দিনের অবরোধ চলাকালে দুর্বৃত্তরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
বুধবার (১ নভেম্বর) অবরোধের সমর্থনে মিছিল নিয়ে পিকেটাররা সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে বাসে আগুন ধরিয়ে দিলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চট্টগ্রামে অবরোধের দ্বিতীয় দিনে বাস ও ট্রাকে আগুন
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী থানা এলাকায় একটি বাসে এবং রাঙ্গুনিয়ায় একটি ট্রাকে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে পটিয়া ও কর্ণফুলীর মাঝামাঝি ভেল্লাপাড়া ক্রসিং এলাকায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাস ভাঙচুর পরে আগুন দেওয়া হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে বুধবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের চৌধুরী গোট্টা এলাকায় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গাছ কেটে ব্যারিকেড দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে সেখানে আসা দুটি খালি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।
ফায়ার সার্ভিসের রাঙ্গুনিয়া স্টেশন কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকের আগুন নেভানো হয়। পরে সড়ক থেকে গাছ কেটে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।