বেতন বাড়ানোর দাবিতে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে, সাভার শিল্প এলাকা এবং গাজীপুর নগরে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভকালে, পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গাজীপুরে এক শ্রমিক নিহত হন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা যানবাহনে ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। সাভারে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাধলে আহত হন ১৫ শ্রমিক।
গাজীপুরে পোশাক শ্রমিক নিহত
বাংলাদেশের গাজীপুরে, বেতন বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলাকালে, এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) নগরীর ভোগড়া এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকের নাম রাসেল হাওলাদার। তিনি নগরীর ডিজাইন এক্সপ্রেস লিমিটেড কোম্পানির বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি ছিলেন। গাজীপুর নগরীর গাছা থানার কলম্বিয়া কারখানার পাশের নুর আলমের বাসার ভাড়া থাকতেন রাসেল হাওলাদার। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে শ্রমিকরা দাবি করলেও; পুলিশের দাবি, তাদের গুলিতে কেউ মারা যায়নি।
শ্রমিকরা জানান, “বেতন বাড়ানোর দাবিতে সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করছিলেন। আন্দোলনের কারণে, ডিজাইন এক্সপ্রেস লিমিটেড-এর কারখানা ছুটি দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনরত অন্য কারখানার শ্রমিকদের ওপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।”
তারা আরো জানান “সে সময় দোকানের সামনে থাকা রাসেল গুলিবিদ্ধ হন। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে তায়ারুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়।” মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তারেক হাসান জানান, “হাসপাতালে একজন গার্মেন্টস কর্মীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। মৃতের গলা ও শরীরে ছোট ছোট গোলাকার লাল রঙের দাগ ছিলো। হাতে ব্যান্ডেজ করা ছিলো।”
তিনি আরো জানান, “আমরা পুলিশের মাধ্যমে মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্তের পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সিদ্দিক জানান, “পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে তারা একটি সিকিউরিটি কোম্পানির গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গুলিবিদ্ধ হয়ে কেউ মারা গেছেন কি না এমনটা আমার জানা নেই।”
গাড়িতে আগুন
বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কালে সোমবার বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর ও একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়।সকালে সপ্তম দিনের মতো গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, নাওজোড়, নলজানী, ও মালেকের বাড়ি এলাকায় কাজ বন্ধ করে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন।
ভোগড়া এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কলম্বিয়া কারখানার শ্রমিকরা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। শ্রমিকদের একটি গ্রুপ গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় অবস্থান নিয়ে যানবাহন ভাঙচুর করতে গেলে, শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কালে একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও তাদের কাজের দাম বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সিদ্দিক জানান, শ্রমিকরা সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে। সড়কে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
সাভারে আহত ১৫
এদিকে, ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মূল বেতনের দাবিতে, ঢাকার অদূরে, সাভারের হেমায়েতপুরে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ শ্রমিক আহত হয়েছেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) হেমায়েতপুরের পদ্মার মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জানান, ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মূল বেতনের দাবিতে, শ্রমিকরা কয়েকটি পোশাক কারখানায় ভাঙচুর করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
তিনি আরো জানান, “সংঘর্ষের সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ছাড়া সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সহিংসতা এড়াতে সাভার ও আশুলিয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”