শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সর্বস্তরের জনগণকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) নয়াপল্টনে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকার বা ক্ষমতাসীন দল যদি কোনো বাড়াবাড়ি করে; বা সমাবেশে কোনো বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে সরকার।”
নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতির জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “এ বিষয়ে ডিএমপিকে আগেই চিঠি দেয়া হয়েছে; আমরা নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাই। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে এই সমাবেশ করবো।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দিয়ে ডিএমপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো চিঠি পায়নি বিএনপি। আমরা এখনো আশা করি, তারা (ডিএমপি) কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না এবং মহাসমাবেশে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়তা করবে।”
মির্জা ফখরুল বলেন যে তাদের সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে, সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দেশে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বিএনপি কোনো সহিংসতার ভয় পায় না, কারণ তাদের দল অতীতে শান্তিপূর্ণভাবে একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে।” বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা লাঠি হাতে রাস্তায় নামার মতো বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, “সরকার তার দমনমূলক নীতি ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে সমগ্র জনগণকে জিম্মি করার চেষ্টা করছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিকভাবে জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি; তারা যেন শনিবারের মহাসমাবেশে যোগ দেয় এবং সরকারকে পদত্যাগ করার; আর ক্ষমতায় না থাকার বার্তা দেয়।” তিনি দাবি করেন, গত সোমবার থেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত, বিএনপির ১ হাজার ৩৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের ২৭ জুলাই থেকে ২৭ আক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির ৪ হাজার ২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার, ৪১৮টি মামলায় ২৮ হাজার ৫৭০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বিএনপির নয় নেতাকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) ব্রাসেলসে বলেছেন, খুব সুন্দর একটি নির্বাচন হবে; কারণ সরকার সেই নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। কিন্তু, আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং প্রতি রাতে তাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ বিষয় হচ্ছে, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাদের নেতাদের সাজা দেয়া হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “সরকার গুরুতর দমনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার; নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া এ দেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো ইচ্ছা নেই আওয়ামী লীগ সরকারের। এ জন্য তারা বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই একতরফাভাবে নির্বাচন করতে সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।”