হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী খালেদা জিয়া ও হাজী সেলিম নির্বাচন করতে পারবেন না: আইনজীবী খুরশীদ আলম

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা পরিচালনাকারী সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছেন, “হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।” সোমবার (২৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, “খালেদা জিয়া এবং হাজী সেলিম, দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাই হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, খালেদা জিয়া, হাজী সেলিম বা এমন সাজাপ্রাপ্ত কেউই আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।”

খুরশীদ আলম খান জানান, “হাইকোর্ট গতকালের (২২ অক্টোবর) প্রকাশিত রায়ে বলেছেন যে সাজা কখনো স্থগিত হয় না। উপযুক্ত আদালতে সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।” তিনি বলেন, “এই রায়ের আলোকে, খালেদা জিয়া ও হাজী সেলিমসহ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ তাদের সাজা বাতিল হয়নি। যদি হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সংশোধন করেন বা বাতিল করেন, তবে সেটা ভিন্ন কথা।”

উল্লেখ্য, রবিবার (২২ অক্টোবর) হাইকোর্ট থেকে প্রকাশিত এক রায়ে বলা হয়, উচ্চ আদালত কর্তৃক সাজা বাতিল না হলে, অথবা সাজা ভোগের পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে, আপিল বিচারাধীন ও জামিনে থাকা কোন দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

প্রকাশিত রায়ে আরো বলা হয়, “এই মামলা থেকে জানা যায় যে আবেদনকারীদের বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তারা দুর্নীতির জন্য দণ্ডিত হয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগ একটি গুরুতর অপরাধ। একজন ব্যক্তির সততার মূলে আঘাত করে দুর্নীতি।”

উচ্চ আদালত আরো বলেছেন, “একজন সংসদ সদস্য হলেন ক্ষমতা, সম্পত্তি ও জনগণের কল্যাণের ট্রাস্টি। তাদের উচ্চ নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের সততা থাকতে হবে। এর থেকে কোনো বিচ্যুতি হলে, তা সততা ও নৈতিক স্খলন হিসাবে বিবেচিত হয়। আমরা মনে করি, যে অপরাধের জন্য আবেদনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা তাদের নৈতিক স্খলন।”

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, “সংবিধান নিজেই একজন সংসদ সদস্যের পদ সৃষ্টি করেছে ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির অযোগ্যতাও নির্ধারণ করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত লোক এমপি হিসেবে নির্বাচিত হলেও, সে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। কারণ, সেটা তার কোনো ভয় ছাড়া ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার শপথের বিপক্ষে চলে যায়।”

“মামলায়, সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই-বাছাই শেষে,আবেদনকারীদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক। ঐ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করেছেন; যা এই আদালতে বিচারাধীন। আপিল বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও, তাদের অবস্থান হলো তারা দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি। এই আদালত তাদের সাজা স্থগিত করেননি; কিন্তু তারা জামিন পেয়েছেন। জামিন আদেশ দ্বারা, সাজা স্থগিত করা হয়েছে বলে মনে করা হয়, কিন্তু দোষী সাব্যস্ততা বলবৎ থাকে। আবেদনকারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাজা স্থগিত রেখে সংবিধানের ৬৬(২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অংশ নেয়ার সুযোগ নেই; উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত।

আদালত বলেন, “উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, যদিও অভিযুক্ত আবেদনকারীদের জামিন দেয়া হয়েছে, তবে সাজা স্থগিতের প্রশ্ন ওঠেনি। সেই অনুযায়ী, দোষী আবেদনকারীদের সাজা ভোগ করে মুক্তির পর ৫ বছর অতিবাহিত না হলে; অথবা উচ্চ আদালত কর্তৃক তাদের সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত; তারা সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ নির্বাচনে অংশ গগ্রহণ করতে পারবেন না।

উল্লেখ্য যে, একজন ব্যক্তি যিনি বৈধভাবে সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে দোষী সাব্যস্ত এবং দণ্ডিত, হলে সংবিধানের ৬৭(১)(ঘ) অনুযায়ী তার আসন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শূন্য হয়ে যায়।

এর আগে, ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর নিম্ন আদালতে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে আপিলে বিচারাধীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে রায় দেন হাইকোর্ট।

দুর্নীতির দায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া সাজা স্থগিত চেয়ে আমান উল্লাহ আমানসহ বিএনপির পাঁচ নেতার আবেদন খারিজ করে এ আদেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ এ রায় দেন। পাঁচ বছর পর রবিবার পর্যবেক্ষণসহ ৪৪ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে।