অবরোধ করলে বিএনপি অবরুদ্ধ হবে—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ১৮ অক্টোবর, ২০২৩।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বিএনপি যদি অবরোধের মতো সরকারবিরোধী কর্মসূচি পালন করে, তাহলে ক্ষমতাসীন দল বিএনপিকে অবরুদ্ধ করবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “যারা অবরোধ আরোপ করে তারাই সাধারণ মানুষের জন্য বাধা"।

বুধবার(১৮ অক্টোবর) বায়তুল মোকারমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমিও একটা বার্তা দিচ্ছি। শেষ বার্তা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হবেন। শেখ হাসিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন”।

পদত্যাগের বিষয়ে বিএনপির হুঁশিয়ারির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা কি পদত্যাগ করবেন? না...”।

ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ম্যাজিক লিডার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন—বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

এদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার) কি ক্ষমতা ছেড়ে নিরাপদে সরে যাবে, নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবে।

তিনি বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচারণা জোরদার করতে মহাযাত্রা শুরু করবে বিএনপি।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।

নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।১৮ অক্টোবর, ২০২৩।

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সরকারের পদত্যাগ এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

ঘোষিত মহাসমাবেশকে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের আংশিক কর্মসূচি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর বিরোধী দল ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

তিনি নেতা-কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, “মহাসমাবেশের পর ইনশাল্লাহ আমরা এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত থামব না”।

মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। “আমরা সকল রাজনৈতিক দল, যারা যুগপৎ আন্দোলন করছি তারা এই কর্মসূচি সফল করব”।

তিনি বলেন, “এটি একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আমরা নিশ্চিত করব”।

মির্জা ফখরুল বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার অনেক বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। “কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হলে সম্ভাব্য সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সমাবেশকে সফল করতে হবে”।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, সরকার আসন্ন পতন উপলব্ধি করে বিভিন্ন অশুভ কৌশল অবলম্বন করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিএনপির সমাবেশের আগে সরকার বিএনপির আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

তারা সম্মানের সঙ্গে ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবেন, সে বিষয়ে দুর্গাপূজার শেষ নাগাদ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অবৈধভাবে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অজুহাত হিসেবে সংবিধানকে দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বললেও তারা সবসময় এর ধারা লঙ্ঘন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা বাস্তবতা যে সরকার দমনমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করে জনগণ ও আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না। “সরকার যত তাড়াতাড়ি এটা উপলব্ধি করবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল হবে”।

মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো বিকল্প না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, সরকার এতটাই নৃশংস ও অমানবিক যে, জীবন বাঁচাতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি নিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশ যোগ দেন।

ফকিরাপুল থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত সড়ক ও গলি-গলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়ে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশের অতিরিক্ত জনতা আশেপাশের রাস্তা এবং স্থানগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপি ছাড়াও সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও এক দফা দাবিতে বিভিন্ন শহরে পৃথক সমাবেশ করেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়াপল্টন এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।