শেরপুরে আবার বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার, পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ

প্রতীকী ছবি

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর ছোট গজনী পাহাড়সংলগ্ন এলাকার ধানখেত থেকে একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে বন্যহাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মকরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মৃত হাতিটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ।

ধানখেতে হাতি তাড়ানোর জন্য পেতে রাখা বিদ্যুতের তারের ফাঁদে পড়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে একই এলাকা থেকে দুটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন খাদ্যের খোঁজে বন্যহাতির দল এই এলাকার ধানখেতে আসছিল। এতে ফসল নষ্ট হচ্ছিল। তাই স্থানীয়রা তাদের ফসল রক্ষা করতে বিভিন্ন উপায়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। এভাবেই হয়তো হাতি তাড়ানোর জন্য পাতা বিদ্যুতের তারের ফাঁদে পড়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে বন বিভাগ, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পর হাতিটির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য হাতিটির শরীরের বিভিন্ন অংশ সংরক্ষণ করে মরদেহটি পুঁতে রাখা হবে।

এদিকে গত পাঁচ মাসে শেরপুরে ঝিনাইগাতী সীমান্তের পাহাড়ী এলাকায় দুটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়ন তাওয়াকুচা বীট এলাকার গত ৬ মে সকালে বিদ্যুতের পাতা ফাঁদে একটি বন্যহাতি মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছিল।

তাছাড়া ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ এলাকা থেকে ২০২২ সালে ২ জুন বন্যহাতির এক মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারও আগে ওই বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইগাতীর গজনী সীমান্তের আঠারোঝোরা এলাকা এবং ২০২১ সালের ৯ নবেম্বর শ্রীবরদী সীমান্তের মালাকোচা ও ১৯ নবেম্বর নালিতাবাড়ী সীমান্তের পানিহাতা এলাকার মায়াঘাসি গ্রাম থেকে তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল।

নাগরিক প্ল্যাটফরম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সভাপতি সুজয় মালাকার এবং সবুজ আন্দোলনের সভাপতি মো. মেরাজ উদ্দিন জানান, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ গভীরভাবে লক্ষ্য করছি যে, গারো পাহাড়ে বন্যহাতির স্বাভাবিক বিচরণে কিছু মানুষ ফসল রক্ষার নামে বাঁধা দিয়ে আসছে। অথচ সরকার হাতি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছে। তারপরও প্রায়ই গারো পাহাড়ে জিআই তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে কিংবা বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে বন্যহাতি হত্যার ঘটনা ঘটছে।

তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবারও ঝিনাইগাতীর ছোট গজনীর ধানখেতের পাশ থেকে একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই হাতিটিকেও হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ হাতি হত্যার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক আমরা তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি করছি।