বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর, নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে রানিং স্টাফরা। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে, তারা ট্রেন চালাবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে উপাচার্যের বাসভবন এবং বাস ভাঙচুরের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। মামলায় অন্তত ৪০০ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বটতলী রেলস্টেশন থেকে কোনো ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা
রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, “দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর আমাদের ২ লোকমাস্টারকে (এলএম) লাঞ্ছিত করা হয়েছে। যেহেতু তাদের নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে, তাই আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর, পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
এদিকে, শাটল টেন বন্ধ থাকার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য বটতলী রেলস্টেশন থেকে ৩টি এবং ষোলশহর রেলস্টেশন থেকে ৫টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। এ ছাড়া, শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে ভিন্ন যানবাহনে ক্যাম্পাসে যাতায়ত করছেন।
শিক্ষার্থী আশফাকুর রহমান বলেন, “হঠাৎ করে ট্রেন বন্ধ হবে, আমরা কেউ জানি না। সকালে বটতলী রেলস্টেশন এসে দেখি ট্রেন চলাচল বন্ধ। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়া, আগে ঘোষণা না দিয়েই, রেলওয়ে শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকেছেন।”
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, “শাটল ট্রেন চালু করতে আমরা রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আশা করি বিষয়টির সমাধান হবে। বিকল্প হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কয়েকটি বাস দিয়েছি।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের ছাদে বসে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চৌধুরীহাট এলাকায় ভেঙে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার জের ধরে, সেই দিন শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে পৌঁছালে, লোকমাস্টারদের লাঞ্ছিত করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনসহ বিভিন্ন এলাকার স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের বেশ কয়েকটি ছোট-বড় গাড়ি।
ভাঙচুরের ঘটনায় ২ মামলা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) উপাচার্যের বাসভবন এবং বাস ভাঙচুরের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হাটহাজারী থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। এক মামলার বাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আবদুর রাজ্জাক; অন্যটিতে বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন বলেন, “৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাটহাজারী থানায় দু’টি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। চাঁদা দাবি ও ভাঙচুরের অভিযোগ এনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।”
মামলা দু’টিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে ৭ জন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাটল ট্রেন ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর শিক্ষার্থীরা ঘটনার প্রতিবাদে ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।