সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারার প্রয়োজন আছে: আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারার আইনি প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, “কারণ পুলিশের কাজ হলো, যদি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেটা বন্ধ করা। আর, অপরাধ সংঘটিত হলে, অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারে সোপর্দ করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা।”

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার-বিজেসির চতুর্থ সম্প্রচার সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, “বিচারে সোপর্দ করতে গেলে, কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সাক্ষ্য-প্রমাণ প্রয়োজন হয় এবং এই সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা ডুলিশের দায়িত্ব। সেখানে যদি পুলিশের হাতটা বেঁধে দেয়া হয়, তাহলে তো তারা সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না। এমন জায়গা আছে, যেখানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রেই কেবল ৪২ ধারা প্রয়োগ করা হবে।”

সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, “২০০৬ সালের আইসিটি আইনে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়েছিলো। এ ধারার বিষয়ে অনেক প্রশ্ন ও আপত্তি ছিলো। আবার সাইবার স্পেস নিয়ন্ত্রণ বা সুরক্ষারও প্রয়োজন ছিলো। এমন প্রেক্ষাপটেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়।”

তিনি বলেন, “এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিলো না যে সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যম বা স্বাধীন সাংবাদিকতা করার জন্য এটা একটা বাধা হয়ে দাঁড়াক। মোটেই এটা ইচ্ছা ছিলো না এবং এটাও সত্য যে বাংলাদেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথাটা একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চয়তা দেয়া আছে।”

আনিসুল হক বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে অপব্যবহার হয়েছে, তা সরকার সবসময় স্বীকার করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৭০০১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে এখনো আছে ৫ হাজার ৯৯৫টি মামলা। এই মামলার শতকরা ৯৫ ভাগ দায়ের করেছে বাংলাদেশের জনগণ। এর মধ্যে হয়তো রাজনীতিবিদও আছেন। যখন দেখা গেলো, এই আইনের কিছুটা অপব্যবহার করা হচ্ছে, তখন কিন্তু সরকার এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে। এরপর সারা পৃথিবীর বেস্ট প্রাকটিসগুলোর বিষয়ে সরকার জ্ঞাত হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “এরপর যখন দেখা গেছে, আইনটিতে কিছু কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন; তখন সেটা নিয়ে কথা হয়েছে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া তৈরির সময়ও আলোচনা হয়েছে। প্রথম দফার আলাপে সরকার এটাকে আরো সহজ করার চেষ্টা করেছে। এখানে যেসব যৌক্তিক আপত্তি পাওয়া গেছে, সেগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।”

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, “বলা হচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তা আইন করার সময় কারো সঙ্গে আলাপ করা হয়নি; কথাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। কেউ হয়তো বলতে পারেন তার সঙ্গে তো আলাপ করা হয়নি, অন্য কারো সঙ্গে তো আলাপ করা হয়নি। কিন্তু এই আইনের বিষয়ে ধারণা নেয়ার জন্য কোথায় অসুবিধা হচ্ছে, কোথায় কী করতে হবে, সেসব কথা বলার জন্য কিন্তু আলাপ-আলোচনা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “তারপরও যখনই আপত্তি উঠেছে, তখনই আলাপ-আলোচনা করেছি। যাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে, তারা হলেন নির্বাচিত প্রতিনিধি। এরপর সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিএফইউজের বেশ কয়েকটি পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে। মিথ্যা মামলার বিষয়ে তাদের যে পরামর্শ ছিলো, সেটা নেয়া হয়েছে। ২১ ধারার বিষয়ে বিএফইউজে থেকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছিলো, তা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন ৪২ ধারা নিয়ে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত আইনের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।