গাইবান্ধায় ৬০ স্কুল বন্ধ, কুড়িগ্রামে জলবন্দী ৭ হাজার পরিবার; আছে নদী ভাঙন

গাইবান্ধায় এখনো জলবন্দী জীবন যান করছেন ৫ উপজেলার অন্তত ৭ হাজার পরিবারের মানুষ। ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়া-কমার মধ্যেই চলছে ভাঙ্গন। নদী গ্রাস করছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে; তবে কমছে কুড়িগ্রাম জেলায়। জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় গাইবন্ধা জেলার ৬০টি স্কুলে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও জনপদ থেকে জল সরেনি। এই জেলায় এখনো জলবন্দী জীবন যান করছেন ৫ উপজেলার অন্তত ৭ হাজার পরিবারের মানুষ। ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়া-কমার মধ্যেই চলছে ভাঙ্গন। নদী গ্রাস করছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি।

গাইবান্ধায় বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে গাইবান্ধা জেলায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকালে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে, জেলার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা তীরবর্তী নিচু এলাকা এবং চরাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় পানি উঠেছে।

এসব এলাকার ফসলি জমি, আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে কয়েক হাজার পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে। জলমগ্ন হওয়ার কারণে, ১৬৫ চরের ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, “পানি বৃদ্ধির ফলে কড়াইবাড়ি, খারজানি, পারদিয়ারা ও কুন্দেরপাড়া গ্রামে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে এসব গ্রামের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে, তিস্তার পানি ২৩ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুন্দরগঞ্জ, সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ৭৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের মানুষ এখনো জলবনদী

এদিকে, কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি টানা সাতদিন বিপদ সীমার উপরে থাকার পর, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও, বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি সরেনি। ফলে বিশুদ্ধ পানি আর রান্না করা খাবারের সংকটে রয়েছেন ৫ উপজেলার প্রায় ৭ হাজার পরিবারের পানিবন্দি মানুষ।

চিলমারীর নয়ারহাট ও শাখাহাতির চরে তীব্র ভাঙনে দুই দিনে ৬০-৮০টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। এখানকার লোকজন বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রাজারহাটের নদীতীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলগুলোর ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, গোচারণ ভূমি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। তিস্তার পাড়ে ভাঙন কিছুটা কমলেও, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

বানভাসি এলাকায় টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায়, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।চাল-সবজি থাকলেও জ্বালানির অভাবে রান্না করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় ৪-৫ পরিবার একসঙ্গে রান্না করছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখার দেয়া তথ্যমতে, জেলায় তৃতীয় ধাপের বন্যায় ১৮ হাজার ৬২৬ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে ৭৯৮টি; আর, ৫ হাজার ৬৮৩ হেক্টর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২ টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র,ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “আগামী ৪৮ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা নেই, ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে যথেষ্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সেগুলোর বিতরণের কাজ চলছে। ১৮টি স্থায়ী এবং ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।”