চারদিকে পানি আর পানি, তারপরও পিপাসার্ত কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিতরা

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী বেগমগঞ্জ এলাকা থেকে তোলা। ছবি: ইউএনবি

বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বাড়ি-ঘর, খেতের ফসলসহ সব কিছু। চারদিকে পানি আর পানি। তারপরও পিপাসার্ত কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। সুপেয় পানির অভাব তীব্র হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের মাঝে।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের খেয়ার আলগা চরের বাসিন্দা সাহেরা বেগম জানান, তার ঘরে পানি উঠেছে। দুই দিন হলো মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নদীর পানি আজ সকালেও এক হাত বেড়েছে। খাওয়ার পানির অভাবে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।

সদর উপজেলার চর যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান বললেন, পাঁচ দিন থেকে বন্যার পানির ভেতর খুব কষ্টে চলাচল করছেন। নৌকা ছাড়া বের হতে পারছেন না। যে হারে পানি বাড়ছে, তিনি জানেন না কী হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামে সবগুলো নদ-নদীর পানি আবার বাড়তে শুরু করছে। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি, আমন ধানখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। কী দিয়ে কাটবে বছর, তারই চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।

এ ছাড়া, রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি ২১ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। এ ছাড়া, তিস্তাসহ অন্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার এলাকার কয়েকটা চরে ব্রহ্মপুত্রের পানিতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি। সরকারের থেকে ৪ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি কিছুটা কমে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যার জন্য বরাদ্দ দেওয়া ৩৬২ টন চাল, ৫ লাখ নগদ টাকা এবং ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার উপজেলাগুলোর চাহিদামতো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সেসব বিতরণের কাজ চলমান এবং শিশুখাদ্য বাবদ ২ লাখ এবং গোখাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা মজুত আছে।