গত এক মাস ধরেই মানে, বর্ষার শুরু থেকেই প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে কিছুদিন আগেই সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল এই রাজ্যটি, যা দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। আবারও অতি বৃষ্টিতে বন্যার কবলে হিমাচল। যত্রতত্র পাহাড়ি ধস নেমে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। ধসে যাচ্ছে মন্দির। নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে সবকিছু। মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আহত ও নিখোঁজ বহু মানুষ। গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে বন্যার জলে।
এমন ভয়াবহ বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবেই দেখছেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। হিমাচলের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে তাই জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “শহরের পর শহর ধসের কবলে। বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে জলে ভাসছে একাধিক এলাকা। যাতায়াত, যোগাযোগ বন্ধ। শতাধিক বাড়ি ধসের কারণে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে। পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। দুর্যোগে কম করেও ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।”
শিমলার পুলিশ সুপার সঞ্জীব কুমার গান্ধী বলেছেন, "শুধু শিমলাতেই গত কয়েকদিনে তিন জায়গায় ধস নেমেছে। শিবমন্দির নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।"
রাজ্য প্রশাসনের তরফে রিপোর্ট দিয়ে বলা হয়েছে, গত জুন মাস থেকেই বৃষ্টি-বন্যার কারণে হিমাচলে মৃত্যু হয়েছে দুই শতাধিক মানুষের। ১১ হাজারের বেশি বাড়িঘর ভেঙে বন্যার জলে ভেসে গেছে। পাঁচশোর বেশি রাস্তা ধসের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। অতি বৃষ্টিতে চারশোর বেশি ট্রান্সফর্মার উড়ে গিয়ে বিদ্যুবিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। ১৪৯টি জল সরবরাহ প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে বহু জায়গায় পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনের অতি বৃষ্টিতে হাজার দুয়েক মানুষকে জলমগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
হিমাচলে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিপাসা নদী। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর। বিপর্যস্ত জনজীবন। উত্তাল বিপাসা নদীতে নিমেষে ভেসে গেছে পর্যটকদের একের পর এক গাড়ি। আগামী কয়েকদিন হিমাচল প্রদেশে লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। দুর্যোগ না থামা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। সরকারের তরফে নির্দেশিকা জারি করে সতর্ক করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে ১১০০, ১০৭০, ১০৭৭ হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে।