গোটা দেশ দৃশ্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে: গণমিছিল কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। আগে ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে এই গণমিছিলের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা। এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “ গোটা দেশ দৃশ্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানী ঢাকার দয়াগঞ্জে মিছিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক ঘুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শুরুর আগে দেয়া বক্তৃতায়, চলমান আন্দোলন দমনে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপিমহা সচিব। তিনি বলেন, “গোটা দেশ দৃশ্যত জেলখানায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা আমাদের অনেক নেতাদের গ্রেপ্তার করেছে।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মির্জা ফখরুল বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ অর্জনকারী নয় পুলিশ কর্মকর্তা এখন সেখানে যেতে পারবেন না।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে আরো নিষেধাজ্ঞার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।”

নিরপেক্ষ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে মর্যাদার সঙ্গে পদত্যাগ করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।এ ছাড়া, তিনি অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কোনো শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, “সরকার জনগণের টাকা চুরি করে আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে।”

এদিকে বিকেল ৪টার দিকে গুলশান এলাকায় ডিসিসি মার্কেটের কাছ থেকে আর একটি মিছিল বের করে বিএনপি। এর উদ্বোধন করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ সময় মির্জা আব্বাস বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ক্ষমতায় থাকতে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন। সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার জন্য বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করছে।”

বিএনপি ছাড়াও, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট, গণতান্ত্রিক বম ঐক্য, ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), এনডিএম, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণঅধিকার পরিষদের দুই পক্ষ পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করছে।

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানোর লক্ষ্য নিয়ে এক দফা আন্দোলনের এটি চতুর্থ কর্মসূচি। গত ১২ জুলাই বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দেয়।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন: বিএনপির প্রতি ওবায়দুল কাদের

এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্টঘ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দেশব্যাপী ধারাবাহিক বোমা হামলার দিনে, এ ঘটনার প্রতিবাদে আয়াজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “প্রতিদিন এক কথা, একটি কথা; তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আমি বিএনপি নেতাদের বলছি যে পৃথিবীতে এখন একটি দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে। সেখানে গেল একজন তত্ত্বাবধায়ক পাবেন।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

তিনি বলেন, “একসময় তার (তারেক রহমানের) বাবা গর্ব করে বলতেন, টাকা কোনো সমস্যা নয়। বাবার মতো সেও বলে, আন্দোলন করো; টাকার অভাব হবে না। এই টাকা কোথা থেকে আসে।” আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিএনপি এখনো সন্ত্রাসবাদের রাজনীতি করে। জেএমবির জন্য বিএনপিই বিশ্বস্ত দল। তারাই তো সিরিজ বোমা হামলা চালিয়েছিলো।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “আজ অবাক লাগে যখন মির্জা ফখরুল বলছেন, আওয়ামী লীগ জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করছে। ফখরুল কি ইতিহাস ভুলে গেছেন? তখন কি তার জন্ম হয়নি?” তিনি বলেন, “তারা বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।”