ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে ১ লাখ কোটি ভর্তুকির ভাবনা কেন্দ্র সরকারের

পেঁয়াজ, টমেটোর মতো সবজির দাম বৃদ্ধি আটকাতে না পারায় সরকার পতনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে দেশে। অতীতে রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সরকার হাতছাড়া হয় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায়।

ভারতে জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামে লাগাম পরাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশ, এই খাতে অন্তত এক লাখ কোটি টাকার সংস্থান করতে হবে। সংবাদ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বরাদ্দে ব্যাপক কাটছাট করে এক লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে জিনিসপত্রের দাম কমাতে। এছাড়া, জ্বালানি তেলের আমদানি শুল্ক কমানোরও ভাবনাচিন্তা করছে কেন্দ্রীয় সরকার।

গত ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন। ছোট উদ্যোগপতিদের এই প্রকল্পে মাত্র পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এবার মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতেও উদ্যোগ নিল সরকার।

সংবাদ সূত্রের খবর, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেখানে দলের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কথা জানানো হয়। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিনই রিপোর্ট পান। উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি হলে অফিসাররা আলাদা করে তাকে ব্রিফ করেন। লালকেল্লার ভাষণে মূল্যবৃদ্ধির সমস্যা স্বীকার করলেও তার দায় প্রধানমন্ত্রী নেননি। তার বক্তব্য ছিল এটা বৈশ্বিক সমস্যা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কিন্তু তিনি জানেন, বিদেশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মানুষের ক্ষোভ সামাল দেওয়া যাবে না। বিরোধীরাও সুযোগ বুঝে এই ইস্যুতে সরকারকে আক্রমণের ধার বাড়িয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দিল্লির এক সবজি বিক্রেতাকে বাড়িতে ডেকে খাওয়ান। জিনিজপত্রের অস্বাভাবিক দামে নাভিশ্বাস উঠেছে জানিয়ে সেই সবজি বিক্রেতা রাজধানীর একটি বাজারের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। সেই ভিডিও কংগ্রেস ভাইরাল করে দেয়।

তাছাড়া, পেঁয়াজ, টমেটোর মতো সবজির দাম বৃদ্ধি আটকাতে না পারায় সরকার পতনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে দেশে। অতীতে রাজস্থান, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির সরকার হাতছাড়া হয় পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায়। মানুষের ক্ষোভ গিয়ে জমা হয় ভোটের বাক্সে।

আগামী নভেম্বরে ভারতে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা ভোট আছে। এরমধ্যে একমাত্র মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেখানে ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি বাকিগুলিতে দল ভাল ফল না করতে পারলে লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে, জানেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী মাসে বিশ্বকর্মা পুজো দিয়ে শুরু হয়ে যাবে উৎসবের মরসুম। স্বভাবতই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকার সচেতন।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, টাকার সংস্থান করা সরকারের কাছে সমস্যা নয়। বাজেট কাটছাঁট নতুন কোনও বিষয় নয়। এমনিতেই প্রতি বছর নভেম্বরে বাজেট সংশোধন করে কম গুরুত্বের মন্ত্রকের বরাদ্দ কমিয়ে বেশি গুরুত্বের মন্ত্রকগুলিতে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়। এবার বেশিরভাগ অর্থই ব্যয় করা হবে খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বাবদ।