যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পালন করা হয় জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে পরিবারের ১৮ সদস্যসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব; তিন ছেলে; ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও ১০ বছর বয়সী শেখ রাসেল; ২ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল; ভাই শেখ আবু নাসের; কৃষক নেতা আবদুর রব সেরনিয়াবাত; যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী আরজু মণি; বেবী সেরনিয়াবাত; সুকান্ত বাবু; আরিফ এবং আব্দুল নাঈম খান রিন্টু।একই দিনে বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২ মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। দিবসটি উপলক্ষে সরকার, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।দিবসটিতে, বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন-সহ বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
এ উপলক্ষে, সারা দেশের মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। দেশব্যাপী কুরআনখানি, দোয়া ও দরিদ্রভোজ-এর আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধা নিবেদন
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জাতির পিতার ৪৮ তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে,তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি।
এর আগে, সকাল ৬টা ২৮ মিনিটে রাষ্ট্রপতি সেখানে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর দু'জন কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করে।
এসময়, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং তিন বাহিনীর প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন।
প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম পেশ করে। তখন বিউগল বাজানো হয় করুণ সুর।
এর পর, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ধানমন্ডি থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এবং ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহীদদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দেন। উভয় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ ছোট বোন শেখ রেহানা তার সঙ্গে ছিলেন।
টুঙ্গিপাড়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। শেখ হাসিনা প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল এসময় রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করেন। এখানে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার সঙ্গে শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন। এসময় স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি ও শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয় এ সময়।
এর আগে, জাতীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে, ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর, সকাল ১১ টা ৩৫ মিনিটে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক নিবাস টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান শেখ হাসিনা।