সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের উত্তরে মণিপুর ও প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা নিয়ে সরব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের উত্তরে মণিপুর ও প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা নিয়ে সরব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

মণিপুর নিয়ে রাজনীতি নির্লজ্জতা বলে বিরোধীদের আক্রমণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের

ভারতের সংসদে বাদল অধিবেশনে চলছে বিরোধীদের আনা অনাস্থা বিতর্ক। বুধবার ৯ অগাস্ট ছিল এর দ্বিতীয় দিন। বিরোধীদের তরফে মণিপুর ইস্যুতে কেন্দ্র সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মোদীকে প্রবল আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, বলেন, "বিজেপি ভারত মাতাকে খুন করেছে।"

এরপর মণিপুর ইস্যুতে এদিন লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, "মণিপুরের হিংসার ঘটনা লজ্জাজনক। কিন্তু সেটা নিয়ে রাজনীতি করা আরও লজ্জাজনক।"

বুধবার অনাস্থা বিতর্কে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে একের পর এক যুক্তিতে বিদ্ধ করেন রাহুল গান্ধী ও অন্য বিরোধী সাংসদরা। এদিন শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অমিত শাহ বলেন, "মণিপুরে যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে আমি সহমত। আমি দুঃখিত এইসব ঘটনার জন্য। কেউই এমন ঘটনার সমর্থন করে না।"

এরপরই শাহ বলেন যে, "আমি মণিপুর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। অধিবেশন শুরুর আগে লেখা চিঠিতেও আমি সে কথা জানিয়েছিলাম। প্রথম দিন থেকেই আলোচনা করতে চেয়েছি আমরা কিন্তু ওরা (বিরোধীরা) তা করতে দেয়নি। শুধুই বিক্ষোভ দেখিয়েছে।"

শাহ আরও বলেন, "মণিপুরের ঘটনা খুবই দুঃখজনক, কিন্তু সেটা নিয়ে নিয়ে রাজনীতি করা আরও বেশি লজ্জাজনক।" তারপরই তিনি যোগ করেন, "গত ৯ বছরে মোদী ৫০ বার উত্তর-পূর্ব ভারতে গিয়েছেন। ওখানকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। ওরা (বিরোধীরা) উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য কী করেছে?’

এরপরই শাহ জোর গলায় বলেন, "বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হবে। মোদী সরকারের উপর আপনাদের আস্থা না থাকতে পারে, কিন্তু জনতার আস্থা আছে। মোদী সরকার আবার ক্ষমতায় আসবে।"

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি প্রধানমন্ত্রীর উপর অনাস্থা নয় আস্থা আছে দেশবাসীর

সংসদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে বিভ্রান্তিকর বলে বুধবার সংসদেই পাল্টা আক্রমণ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার কথায়, "এই অনাস্থা প্রস্তাব এমন একটি সরকারের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে যাদের প্রতি শুধু সংসদে নয় গোটা দেশের আস্থা আছে।"

বুধবারই অনাস্থা বিতর্কে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই কংগ্রেসকে নিশানা করে কাশ্মীর নিয়ে সরব হন। মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে নিত্যানন্দ বলেন, "কংগ্রেস জমানায় শত শত কাশ্মীরি পণ্ডিতকে রাজ্য ছাড়া হতে হয়। আজ জম্মু কাশ্মীরে সেই পরিস্থিতি নেই ।"

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই দাবি উড়িয়ে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ পাল্টা দাবি করেন, "বিজেপি শাসনে কতজন পণ্ডিত সমাজের মানুষ উপত্যকায় ফিরতে পেরেছেন?" তার কথায়, "জম্মু কাশ্মীরের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি।"

অমিত শাহ বুধবার অনাস্থা প্রস্তাবের উপর বিতর্কে অংশ নেবেন তা আগে থেকেই স্থির ছিল। বৃহস্পতিবার ১০ অগাস্ট বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূচি বদলে রাহুল গান্ধী বুধবার বিতর্কে অংশ নেওয়ায় অমিত শাহের ভাষণ শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল।

তিনি বলেন, "সংসদে এখনও পর্যন্ত ২৭ বার অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে। সরকারকে আস্থা প্রস্তাব পেশ হয়েছে ১১ বার। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ক্ষেত্রে অনাস্থার প্রশ্নই ওঠে না । সরকারের তরফে আস্থা প্রস্তাব আনারও প্রশ্ন ওঠে না। আজকের প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশ ঘুরে বেড়ান। তিনি মানুষের সঙ্গে কাটান। মানুষের পূর্ণ আস্থা আছে বর্তমান সরকারের প্রতি।"

প্রসঙ্গত, অঙ্কের হিসাবে মোদী সরকারের পাশে ৩৩০ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে। এরমধ্যে বিজেপির একারই সাংসদ সংখ্যা ৩০১ জন। এছাড়াও বিজু জনতা দল ও ওয়াইএসআর কংগ্রেস অনাস্থা বিতর্কে সরকারের পাশে আছে। অন্য দিকে ২৬ দলের ইন্ডিয়া জোটের পাশে আছে ১৪৪ সাংসদের সমর্থন। ফলে সরকার পতনের প্রশ্ন নেই।

অমিত শাহ বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদের নিশানা করেন। ১৯৯৯ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকারের ১৩ মাসের সরকার মাত্র এক ভোটে হেরে গিয়েছিল। পতন হয়েছিল সরকারের। শাহ বলেন, "বিজেপি সেদিন চেষ্টা করলেই সরকার বাঁচিয়ে নিতে পারত। কিন্তু তাতে গণতন্ত্র বিপন্ন হত।" স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বিজেপি সর্বদা গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই করে। কংগ্রেস চায় ক্ষমতা।

প্রসঙ্গত, অতীতে নরসিংহ রাও সরকারের বিরুদ্ধে এমপি কিনে সরকার বাঁচানোর অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ২০০৮ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারও একই পথে সংসদে ভোটাভুটিতে সরকার রক্ষা করে বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। শাহ বুধবার সেই প্রসঙ্গই ভাষণে তুলে আনেন। তার বক্তব্য, "বাস্তব হল দেশে এখন বিরোধীদের প্রতিই তীব্র অনাস্থা বিরাজ করছে।"