এলএনজি টার্মিনাল পরিষেবা প্রদানকারী হিসেবে তাদের বিদ্যমান চুক্তির বাইরে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এলএনজি সরবরাহ পেতে সামিট গ্রুপ ও এক্সেলারেট এনার্জির সঙ্গে নতুন চুক্তি সই করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
বুধবার (৯ অগাস্ট) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পৃথক দুটি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
ভার্চুয়াল এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৫ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এক্সেলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের কক্সবাজারের মহেশখালীর একটি ভাসমান টার্মিনাল এবং রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিটের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে ২০২৬ সাল থেকে প্রতি বছর ১ থেকে ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি সরবরাহ করবে।
অনুরূপ আরেকটি প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৫ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে সামিট গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড তাদের কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপিত একটি এফএসআরইউয়ের মাধ্যমে ২০২৬ সাল থেকে বার্ষিক ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ করবে।
মন্ত্রিপরিষদ কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল আহসান। তবে তিনি সামিট ও এক্সেলারেট এনার্জি এবং এলএনজির দর সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেননি।
আমিনুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, “সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিজিপি) চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এলএনজির দর সম্পর্কে জানতে পারবেন।’
বর্তমানে এক্সেলারেট এনার্জি ও সামিট গ্রুপ কাতার ও ওমান থেকে পেট্রোবাংলার আমদানি করা এলএনজি পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করার জন্য যথাক্রমে ২০১৮ ও ২০১৯ সাল থেকে সরকারকে এফএসআরইউ পরিষেবা দিয়ে আসছে।
দুই কোম্পানি আরও দুটি এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। এর একটি মহেশখালীতে, আরেকটি পটুয়াখালীর পায়রায়।
সামিট গ্রুপ মহেশখালীতে দ্বিতীয় এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সেলারেট এনার্জির প্রস্তাবটি অনুরূপ অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ মরিয়া হয়ে এলএনজি আমদানির দিকে তাকিয়ে আছে।
পেট্রোবাংলা প্রতিদিনি ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে, যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। আর আমদানি করা হয় ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
ফলে দেশে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার এমএমসিএফডি ঘাটতি থাকছে।
সম্প্রতি, পেট্রোবাংলা কাতার ও ওমানের সঙ্গে দুটি নতুন চুক্তি সই করেছে। যাতে দুই দেশের সঙ্গে বিদ্যমান দুটি চুক্তির বাইরে ২০২৬ সাল থেকে আরও এলএনজি সরবরাহ পাওয়া যায়।
এদিকে, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মূল প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে ইলেকট্রিক (সুইজারল্যান্ড) জিএমবিএইচ সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতির (ডিপিএম) অধীনে ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারড কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের গ্যাস টারবাইনের ক্ষতিগ্রস্ত কম্প্রেসারের মেরামত পরিষেবা গ্রহণের জন্য নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদের অর্থনীতিবিষয়ক কমিটি।
এ ছাড়া, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) অধীনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ‘পূর্বাচল নিউ টাউনে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রিপরিষদ কমিটি নীতিগতভাবে আরেকটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
রাজউক পূর্বাচল নিউ টাউনে একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।