ভারতের উত্তর-পূর্বের মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গায় শনিবার ৫ অগাস্ট ভোররাতে সশস্ত্র জনতার হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। মৃতদের দু’জন সম্পর্কে বাবা ও ছেলে। তৃতীয়জন গ্রামরক্ষী। বিষ্ণুপুর জেলার কোয়াকতায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত গুলির লড়াই চলে। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী আহত হন। যৌথবাহিনীর গুলিতে হামলাকারীদের কেউ নিহত বা আহত হয়েছে কিনা জানা সম্ভব হয়নি। জায়গাটি ঘন জঙ্গলে ঢাকা।
শনিবার ভোররাতের ঘটনা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কোয়াকতা হল বিষ্ণুপুর এবং চূড়াইচাঁদপুর জেলার মধ্যবর্তী এলাকা।
রাজধানী ইম্ফল থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরের বিষ্ণুপুর জেলায় মইতেই সম্প্রদায়ের বাস বেশি। জাতিদাঙ্গা শুরুর পর ওই এলাকা থেকে কুকিরা অন্যত্র পালিয়ে গেছেন। হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। মৃতদের বিষ্ণুপুরের জমিতে কবর দেওয়া যাবে না বলে মইতেইরা দাবি তুলেছে। দেহগুলি এখনও ইম্ফলের হাসপাতালে রাখা আছে।
অন্যদিকে, চূড়াইচাঁদপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল কুকিরা। সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে মইতেইরা। তাদের অনেকেই জাতিদাঙ্গায় কুকিদের হিংসার শিকার হয়েছেন।
কোয়াকতা হল দুই জেলার মাঝামাঝি একটি অঞ্চল, প্রশাসন যে এলাকাকে বাফার জোন বা নিরাপদ এলাকা হিসাবে রক্ষা করে চলেছে। সেখানে যাতায়াতে কড়াকড়ি আরোপ করা ছাড়াও ২৪ ঘণ্টা সেনা-আধাসেনা ও পুলিশের প্রহরা রয়েছে। চূড়াইচাঁদপুর ও বিষ্ণুপুরের মধ্যে যাতায়াত একপ্রকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি যাতায়াতের অনুমতি আছে।
শনিবার ভোররাতের ঘটনাটি আরও দুশ্চিন্তার বলে প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য। মনে করা হচ্ছে হামলাকারীরা কুকি সম্প্রদায়ের কোনও উগ্র সংগঠনের সদস্য। হামলায় নিহতরা সকলেই মইতেই সম্প্রদায়ের লোক।
রাত দু’টোর পর কয়েকশো হামলাকারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে মইতেই অধ্যুষিত এলাকায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালায়। তুমুল লড়াইয়ের পর বেষ্টনী ভেদ করে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গা ঢাকা দেয় তারা। মণিপুর পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ওই এলাকার নিরাপত্তা বেষ্টনী রক্ষার দায়িত্বে আছে অসম রাইফেলস। গত কয়েকদিন ধরেই সেখানে সংঘর্ষ চলছে। প্রশাসনের আশঙ্কা, শনিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিষ্ণুপুর ফের অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। দু-পক্ষের হাতেই এখন মারাত্মক সব অস্ত্রসস্ত্র মজুত আছে।
শনিবার মণিপুরে দুই জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে মর্টার-গ্রেনেড-গুলির লড়াই, মৃত ৬, ইম্ফলে ভস্মীভূত ১৫টি বাড়ি
শনিবার ৫ অগাস্ট ইম্ফল সহ মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালিয়েছিল সেনাবাহিনী। তাতে একজন দাঙ্গাকারীকে গ্রেফতারও করা হয়েছিল। সংবাদ সূত্রের খবর, শনিবার দিনভর চূড়াচাঁদপুর-বিষ্ণুপুর সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে মর্টার-গ্রেনেড-গুলির লড়াই চলেছে। তাতেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
প্রাণহানির প্রতিবাদে ইম্ফল পশ্চিম জেলার ল্যাংগোলে অন্তত ১৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে ক্ষিপ্ত জনতা।
শনিবার সকালেই বিষ্ণুপুর জেলার কোয়াকতা এলাকার একটি গ্রামে কুকি জঙ্গিদের আক্রমণে তিনজন নিরস্ত্র গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ৩ জনের মধ্যে দুজনকে গুলি করে খুন করার আগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। এরপরেই পাল্টা আক্রমণ করে প্রতিপক্ষ দলের সদস্যরা। গ্রেনেড, মর্টার নিয়ে আক্রমণ চালানো হয় কোয়াকতা লাগোয়া ফুজাঙ এবং সংডো গ্রামে। এই হামলায় দুজনের মৃত্যু হয়, এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। এছাড়া বিষ্ণুপুর জেলার তেরখাংসাংবিতে আরও একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনায় পুলিশের একজন কমান্ডো সহ আরও তিনজন আহত হয়েছেন।
ইম্ফল পূর্ব জেলার সংসাবি এবং থামনাপোকপিতে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলি ছোঁড়ার খবর পাওয়া গেছিল। যদিও তাতে কেউ হতাহত হননি।
এতগুলি প্রাণহানির প্রতিবাদে ক্ষিপ্ত জনতা ইম্ফল পশ্চিম জেলার ল্যাংগোলে অন্তত ১৫টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ এবং নিরাপত্তা রক্ষীরা। এলাকায় প্রচুর পরিমাণে আধা সেনা এবং পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কারফিউ পরিস্থিতিও শিথিল করা হয়নি। যদিও রবিবার ৬ অগাস্ট সকালে পরিস্থিতি অনেকটাই আয়ত্তে আনা গিয়েছিল বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়।