তারেক-জোবাইদার বিচারের রায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে-তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে তারেক রহমান এবং তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিচারের রায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে”।

হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের সরকার এই মামলা দায়ের করে নাই। বিএনপির (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) পছন্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারই এই মামলা করেছিল। আমাদের সরকার যদি প্রতিহিংসাপরায়ণ হতো তাহলে আমরা মামলা করতাম। আর রায়ের জন্যও ১৪ বছর অপেক্ষা করতে হতো না, অনেক আগেই রায় হতো”।

বৃহস্পতিবার (৩ অগাস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, “রায়ের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে। আজকে ও আগামীকালও তাদের কর্মসূচি আছে। কিন্তু আমাদের সরকারের আমলে এই মামলা হয়নি। এই মামলা হয়েছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন ইয়াজউদ্দিন সাহেবকে বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি বানিয়েছিলেন। আর বিশ্বব্যাংকে কর্মরত ফখরুদ্দীন সাহেবকে ধরে এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আর সেই সেনাসমর্থিত সরকারের সেনাবাহিনীর প্রধান বানানো হয়েছিলো ৭ জনকে ডিঙ্গিয়ে। তাদের পছন্দের মানুষরাই যখন ক্ষমতায়, তখন এই মামলা করা হয়েছিল, সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছে”।

রায় নিয়ে বিএনপির বিরূপ মন্তব্যের জবাবে হাছান মাহমুদ আরও বলেন, “আইন-আদালত কোনো কিছুর ওপরই তো বিএনপির কোনো আস্থা নেই, কোনো কিছুকে তারা তোয়াক্কা করে না, শুধু ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের কাছে যায়। আমরা বিদেশিদের কাছে যাই না, বিদেশিরা প্রয়োজনে আমাদের কাছে আসে”।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে”।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তারেক-জোবাইদাকে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে-বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে বেআইনি ও অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাই রায় ঘোষণার পরপরই হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ অগাস্ট) ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ের প্রতিবাদে শুক্রবার (৪ অগাস্ট) রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ করবে দলটি।

এর আগে বুধবার (২ অগাস্ট) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “চলমান এক দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই রায় দেওয়া হয়েছে। দেশের জনগণ বিচারের নামে বিদ্বেষমূলক প্রহসন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই রায়ে সরকার প্রধানের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে”।

মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের বর্তমান আন্দোলন যখন দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে এই রায় দেওয়া হয়েছে। “চলমান আন্দোলন নেতৃত্বহীন করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দিয়ে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করা যাবে না। আমরা এই রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই”।

মির্জা ফখরুল তাদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলায় সাজা প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত।

একই সঙ্গে তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জোবাইদাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত।

ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার কয়েক মিনিট পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, আবদুস সালাম ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে নয়াপল্টন এলাকায় বিক্ষোভ করেন বিএনপির অনুসারীরা।

রায়ের প্রতিবাদে বিএনপির বিভিন্ন নগর ও জেলা শাখাও একই ধরনের বিক্ষোভ করেছে।

নয়াপল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম শুক্রবার নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল ও ছাত্রদল।