মণিপুর জনজাতি দাঙ্গা: রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করে তাঁর সঙ্গে দেখা করল বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'

মণিপুর জনজাতি দাঙ্গা: রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করে তাঁর সঙ্গে দেখা করল বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'।

ভারতের দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুর নিয়ে এবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হস্তক্ষেপ চান বিরোধী নেতারা। বুধবার ২ অগাস্ট রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন ২৬টি দলের বিজেপি-বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া'-র সাংসদেরা। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর মৌনতা ভাঙতে হস্তক্ষেপ করুন রাষ্ট্রপতি।

গত ৩ মে মণিপুরে জাতিদাঙ্গা শুরুর মাস খানেকের মাথায় বিরোধী দলগুলি একবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল। গত মাসে অর্থাৎ জুলাই মাসে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হওয়ার পর বুধবারই প্রথম জোটের শরিক নেতারা রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে মণিপুর নিয়ে বিবৃতি দিতে বলতে পারেন না। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ দেওয়ার কোনও সাংবিধানিক অধিকার নেই। একমাত্র সংখ্যালঘু সরকারের ক্ষেত্রে তিনি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার নির্দেশ জারি করতে পারেন। সরকারের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ রাষ্ট্রপতির নেই। রাষ্ট্রপতি ভবন সাধারণত স্মারকলিপির কপি প্রধানমন্ত্রী বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেয়।

তবে নির্দেশ দিতে না পারলেও রাষ্ট্রপতি চাইলে সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন। অবশ্য তা একান্তই রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রশ্ন। তবুও বিরোধী দলগুলি সংবিধানের রক্ষক হিসাবে রাষ্ট্রের যে কোনও বিষয়ে বিবাদ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ রুজু করে থাকে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিরোধী জোটের নেতাদের রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার সময়টি। মঙ্গলবার ১ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, মণিপুরে আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। রাজ্য পুলিশের নিরপক্ষেতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে, সরকারি সূত্রে খবর বুধবারও লোকসভায় মণিপুর নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা কম। দিল্লি সরকারের অফিসার বদলি সংক্রান্ত বিলটি মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের বাধায় বিতর্ক এগোতে পারেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিরোধীদের বাধার মুখে মাঝপথে ভাষণ থামাতে হয়। সূত্রের খবর, সরকারের কৌশল হল বুধবার যে কোনও মূল্যে বিতর্ক চালিয়ে যাওয়া হবে। সরকারের আরও এক কৌশল হল, যে কোনও পরিস্থিতিতে বিল পাশ করিয়ে নেওয়া। রাজ্যসভায় ইতিমধ্যে তিনটি বিল সরকার পাশ করিয়ে নিয়েছে।

মণিপুর নিয়ে শাসক ও বিরোধীদের মূল সংঘাতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় সরকার পক্ষ মণিপুর নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করলেও বিরোধীরা অংশ নেননি। বিজেপির রাজ্যসভার নেতা বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল আলোচনা শুরু করা মাত্র বিরোধীরা মোদীর বিবৃতি দাবি করে প্রতিবাদে সরব হন। পরিস্থিতির চাপে অধিবেশন মুলতুবি করে দেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়।