যৌন নিগ্রহের মিথ্যে মামলায় গুরুত্ব হারাচ্ছে সত্যি ঘটনা, পুরুষেরা ফাঁসছেন মিথ্যে অভিযোগে: ভারতের আদালতের পর্যবেক্ষণ

যৌন নিগ্রহের মিথ্যে মামলায় গুরুত্ব হারাচ্ছে সত্যি ঘটনা, পুরুষেরা ফাঁসছেন মিথ্যে অভিযোগে: ভারতের আদালতের পর্যবেক্ষণ।

ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট এক মামলার শুনানিতে পর্যবেক্ষণ হিসাবে মন্তব্য করেছে - যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে মিথ্যে অভিযোগের ভিড়ে এখন যৌন অপরাধের সত্যি ঘটনাগুলিই ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আদালত তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও জানিয়েছে, অনৈতিকভাবে সুবিধা নেওয়ার জন্য অনেক মেয়ে এবং মহিলাই স্বেচ্ছায় কোনও পুরুষের সঙ্গে দীর্ঘ সময় শারীরিক সম্পর্কে থাকার পর থানায় গিয়ে সঙ্গীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মিথ্যে অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করছেন, এমন ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে৷ এলাহাবাদ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সিদ্ধার্থ তাঁর পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, আইন পুরুষদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং এই জাতীয় বিষয়ে জামিনের আবেদন খতিয়ে দেখার সময় আদালতের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

যে মামলার প্রেক্ষিতে এলাহাবাদ আদালত একথা জানিয়েছে সেই মামলায় অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং পকসো আইনে ধর্ষণ সহ আরও বেশ কয়েকটি অপরাধে আটক করা হয়েছিল। অভিযুক্ত জামিন চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেওয়ার দাবি তুলে অভিযোগকারিণীর আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্ত নাবালিকার সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। শুধু তাই নয়, পরে যৌনতা উপভোগ করার জন্যই সে অভিযোগকারিণীকে বিয়ে করে।

এমনকী, সে নাকি তার তুতো ভাইয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য স্ত্রীকে চাপ দিত, এবং তাতে অভিযোগকারিণী আপত্তি জানালে তাঁকে দুই ভাই মিলে বেধড়ক মারধরও করে।

যদিও অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, অভিযোগকারিণী একজন প্রাপ্তবয়স্ক এবং গত এক বছর ধরে অভিযুক্তের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। তিনি স্বেচ্ছায় তার বাড়ি ছেড়ে অভিযুক্তের কাকার বাড়িতে যান, যেখানে সম্মতিক্রমে তাঁর মক্কেলের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর স্বেচ্ছায় তারা বিয়েও করে নেন। যদিও পরে মেয়েটির বাবা-মা তাকে এসে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে চলে যান। এরপর দুই পরিবারের মধ্যে এই নিয়ে বিবাদ শুরু হলে অভিযোগকারিণী স্বামীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন।

সেই মামলায় আবেদনকারীকে জামিন দেওয়ার সময় আদালত খেয়াল করে যে, মিথ্যা অভিযোগ এবং ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। আদালত আরও জানিয়েছে যে অভিযোগকারিণী এবং আবেদনকারীর মধ্যে বিবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। এবং আইনিভাবে বা আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি, কিংবা বিয়ে বাতিল করেও দেওয়া হয়নি।

বিচারপতি জানিয়েছেন, আইনি বিশেষজ্ঞ কিংবা হেড ক্লার্ককে দিয়ে খুব সুচারুভাবে থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনায় বহুক্ষেত্রেই মিথ্যে অভিযোগ দায়ের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এবং এক্ষেত্রেও তাই-ই ঘটেছে।

এরপরেই তার পর্যবেক্ষণে আদালত জানিয়েছে, বর্তমান ঘটনার মতো ইচ্ছে মতো যে কোনও অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করা খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অল্পবয়সি ছেলে-মেয়েদের উপর সোশ্যাল মিডিয়া, সিনেমা এবং টিভি শোগুলির প্রভাব থাকছে, যার ফলে ‘মুক্তমনা সংস্কৃতি’ আরও প্রচার পাচ্ছে। যখন এই আচরণ ভারতীয় সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিরোধ ঘটায়, যা পরিবার এবং মেয়েদের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে জরুরি হয়ে ওঠে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই তার পরিণতিতে এভাবেই মিথ্যে মামলা দায়ের হয়।

"এই ধরনের এফআইআরগুলি দায়ের করা হয় যখন অল্প সময়/দীর্ঘ সময় লিভ-ইন-রিলেশনে থাকার পরে কোনও বিষয়ে যুগলের মধ্যে বিবাদ হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এক সঙ্গীর সামনে অন্য সঙ্গীর প্রকৃতি প্রকাশ পায় এবং তারপরে তারা বুঝতে পারেন যে তাদের সম্পর্ক আজীবন চলতে পারে না, তখন ঝামেলা শুরু হয়," জানিয়েছেন বিচারপতি।

আদালত আরও জানিয়েছে, যেহেতু আইনে মেয়ে এবং মহিলাদের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে, তাই তারা সহজেই এই মামলার মতো মামলায় ছেলেদের জড়িয়ে ফেলতে সফল হয়।