ভার‍তের সংসদে সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটির সুপারিশ - রাষ্ট্রীয় সম্মান, সরকারি পুরস্কার নিলে ভবিষ্যতে ফেরানো যাবে না

ভার‍তের সংসদে সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটির সুপারিশ - রাষ্ট্রীয় সম্মান, সরকারি পুরস্কার নিলে ভবিষ্যতে ফেরানো যাবে না

ভারতের সংসদের সংস্কৃতি বিষয়ক একটি কমিটি সুপারিশ জমা করেছে যে - দেশের পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রীর মতো অসামরিক রাষ্ট্রীয় সম্মান, সাহিত্য আকাদেমির মতো সরকারি পুরস্কার প্রাপক ভবিষ্যতে কোনও অবস্থাতেই সেগুলি ফেরাতে পারবেন না। সম্মান, পুরস্কার নেওয়ার আগেই তাঁদের এই মর্মে হলফনামা পেশ করে অঙ্গীকার করতে হবে। এই কমিটির চেয়ারম্যান কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির মিত্র দল ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সাংসদ ভি বিজয়াসাই রেড্ডি।
এই কমিটি বলেছে, "প্রস্তাবিত পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছ থেকে একটি অঙ্গীকার পত্র নেওয়া উচিত যে ভবিষ্যতে কোনও অবস্থাতেই পুরস্কারকে অসম্মান করতে পারবেন না। এই ধরনের অঙ্গীকার ছাড়া পুরস্কার দেওয়া যাবে না। পুরষ্কারগুলি ফেরত দেওয়া হলে, পুরষ্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ভবিষ্যতে এই জাতীয় পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হবে না।"

কমিটি এই মতামত দিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। তাঁরা জানিয়েছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৩৯ জন ব্যক্তি প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে সাহিত্য আকাদেমির পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন। তবে তারপর থেকে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার কোনও দৃষ্টান্ত নেই।

তা সত্বেও কমিটি মনে করে রাষ্ট্রীয় সম্মান রক্ষায় পুরস্কার না ফেরানোর শর্ত থাকা দরকার। কমিটির এমন প্রস্তাবের কথা জানাজানি হতে রাজনৈতিক মহল ও নাগরিক সমাজের অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রাষ্ট্রের সম্মান রক্ষার্থে অনেকে পুরস্কার ফিরিয়ে দেন সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে। রাষ্ট্রের তরফে যেহেতু সরকার পুরস্কার প্রদান করে তাই সেটি ফেরানো সরকারকে বার্তা দেওয়া, রাষ্ট্রকে অসম্মান করা নয়।

প্রসঙ্গত, চেয়ারম্যান অবিজেপি দলের সাংসদ হলেও কমিটিতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন প্রস্তাব পাশ করানোর পিছনে আছে বিজেপি শিবিরের সংসদদের চাপ - এমনটা মনে করছে বিরোধী দলের একাংশ।

ওয়াইএসআর কংগ্রেসের ভি বিজয়সাই রেড্ডির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি, রিপোর্টের ৯৫ নম্বর প্যারায় বলেছে, "সাহিত্য আকাদেমি বা অন্যান্য আকাদেমিগুলি অরাজনৈতিক সংগঠন। রাজনীতির কোনও স্থান নেই। কমিটির তাই পরামর্শ, যখনই একটি পুরস্কার দেওয়া হবে, প্রাপকের সম্মতি নিতে হবে, যাতে তিনি রাজনৈতিক কারণে এটি ফেরত না দেন। কারণ এটা দেশের জন্য অসম্মানজনক।"

কমিটির রিপোর্ট নিয়ে দলগত বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।

তবে নাগরিক সমাজের একাংশের মত, সরকারের জনবিরোধী কার্যকলাপের বিরোধিতা করে পুরস্কার, সম্মান ত্যাগ একটি প্রচলিত প্রতিবাদ, যে অধিকার কেড়ে নিতে চাওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকারের অনুগত, তথাকথিত দেশপ্রেমী, জাতীয়তাবাদী বিশিষ্টজনকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেওয়ার রাস্তা খোলা হচ্ছে। যাঁরা হলফনামা দিয়ে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করবেন, এটি তাঁদের বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্ত।