দিল্লির সেন্টার ফর সাইট-এর চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হর্ষ কুমার বলছেন, দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় কনজাংটিভাইটিস-এ আক্রান্ত অন্তত ৬৪৬ জন। দেশে এই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। 'শার্প আই' হাসপাতালের ডিরেক্টর ডা. সমীর সুদ-এর কথায়, বর্ষা আর বসন্তে কনজাংটিভাইটিস-এর প্রকোপ বাড়ে। আর চলতি বছরে তার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে একটু বেশি। বিশেষজ্ঞদের কাছে ভিড় জমছে রোগীর। তার মধ্যে স্কুল পড়ুয়াদের সংখ্যা বেশির দিকে।
চিকিৎসরা অবশ্য জানিয়েছেন, এই রোগ সংক্রামক। যেহেতু গত তিন বছরে করোনা পরিস্থিতির জেরে দূরত্ব-বিধি ছিল, সেই কারণে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল কম। কোভিড মহামারী শেষ হয়ে সেই দূরত্ব-বিধি কমে যাওয়ায় এই রোগ এ বছরে বেশি ছড়িয়েছে। শিশুদের মধ্যে চোখে-মুখে হাত দেওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে কারও এক জনের হলেই সেটা দ্রুত অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি, নয়ডা, গুজরাত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতেও কনজাংটিভাইটিস-এর প্রকোপ বেড়েছে।
কনজাংটিভাইটিস হল কনজাংটিভার ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ। কনজাংটিভা হল চোখের স্বচ্ছ লেয়ার বা স্তর, অর্থাৎ চোখের সাদা অংশের ওপরের আস্তরণ। কর্নিয়ার মার্জিন থেকে স্ক্লেরা এবং আই লিডের পেছনের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এই কনজাংটিভা। এই অসুখের কারণ হিসাবে রয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। অ্যাডিনোভাইরাস কনজাংটিভায় সংক্রমণ ছড়ায়, সেখানে বংশবিস্তার করে সংখ্যায় বাড়ে। মনে হয় যেন চোখে ধুলোবালি জাতীয় কিছু পড়েছে, চোখ কড়কড় করে। মূলত চোখ টকটকে লাল হয়ে ফুলে যায়, কড়কড় করে ও চোখ থেকে পিছুটি পড়ে।
কনজাংটিভাইটিস-এর লক্ষণ
১. চোখ লাল হয়ে ফুলে যায়
২. চোখ কটকট করে
৩. চোখ জ্বালা করে
৪. চোখ দিয়ে জল পড়তে পারে
৫. চোখে সব সময় একটা অস্বস্তি ভাব থাকে
৬. ডিসচার্জ বেশি হলে দৃষ্টিও কিছুটা কমতে পারে
৭. কিছু কিছু কনজাংটিভাইটিস, যেমন ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস-এ চোখে এতটাই ডিসচার্জ থাকে যে, ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা জুড়ে যেতে পারে। চোখে সামান্য ব্যথাও হতে পারে।
৮. আলোর দিকে তাকালে সমস্যা হতে পারে।
৯. জল পড়া এবং চোখ কটকট করাটাই কনজাংটিভাইটিস-এ প্রধান সমস্যা।
সারা ভারতে বাড়ছে চোখের সংক্রমণ, বর্ষায় প্রকোপ বাড়াচ্ছে কনজাংটিভাইটিস
চোখের সংক্রমণ ছোঁয়াচে
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় প্রতি বছরই এই সময়টা জীবাণুদের অতি সক্রিয়তার কারণে চোখের সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃষ্টি আর গরম একসঙ্গে চলার কারণে কনজাংটিভাইটিস-এর ঝুঁকি বাড়ে।
চোখের এই সংক্রমণ খুব ছোঁয়াচে। চোখের জল থেকে বাড়ির অন্যদের তো, বটেই কাছাকাছি যাঁরা আসেন তাঁদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারও কনজাংটিভাইটিস হলে আলাদা গামছা বা তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে। চোখে হাত দিলে জামা কাপড়ে না মুছে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। তা হলেই অনেকটাই ছোঁয়াচ বাঁচানো যায়। পরিষ্কার ঠান্ডা জলে দিনে তিন থেকে চার বার চোখ ধুতে হবে। কনজাংটিভাইটিস হোক বা চোখের অন্য কোনও সংক্রমণ, নিজে থেকে ওষুধ কিনে লাগাতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা।