ভারতে উত্তর প্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্ত্বরের কার্বন ডেটিংয়ে অনুমতি স্থানীয় আদালতের

ভারতে উত্তর প্রদেশের বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্ত্বরের কার্বন ডেটিংয়ে অনুমতি স্থানীয় আদালতের

ভারতের উত্তর প্রদেশে বারাণসীর‌ জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্ত্বরের কার্বন ডেটিংয়ের অনুমতি দিল স্থানীয় একটি আদালত। শুক্রবার ২১ জুলাই ওই আদেশে বারাণসীর আদালত আর্কিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়াকে আগামী ৪ অগস্টের মধ্যে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে বলেছে। বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে হবে তারপরে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে।

তবে সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ থাকায় মসজিদ চত্ত্বরে গত বছর পাওয়া পাথরখণ্ডের কার্বন ডেটিং করা যাবে না। দেশের শীর্ষ আদালত মে মাসে এক রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই সংক্রান্ত রায় খারিজ করে দিয়ে বলেছিল বিষয়টি স্পর্শকাতর, এই বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার আগে আরও গভীরে ভাবনাচিন্তা করা দরকার।

রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অনেকের মতে, স্থানীয় আদালতের শুক্রবারের রায়ের পর বারাণসীর মন্দির-মসজিদ বিতর্ক নয়া মোড় নিতে পারে। এমনিতেই আইনজ্ঞদের একাংশ মনে করছে, বারাণসীর এই আইনি বিবাদ অযোধ্যার পর মন্দির-মসজিদ বিতর্কের দ্বিতীয় পর্ব হয়ে উঠতে চলেছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল, বারাণসীর সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, এমনকী বিজেপি নেতারা এই মামলা সম্পর্কে নীরব।

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে সুপ্রিম কোর্ট সায় দেওয়ার পর বিজেপি এবং আরএসএস জানিয়েছিল, তারা আর এই জাতীয় বিবাদে পাশে থাকবে না। তারপরও বারাণসী এবং মথুরায় মন্দির-মসজিদ বিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে দেখেও বিজেপি এবং আরএসএস কর্তারা কোনও মন্তব্য করেননি। সূত্রের খবর, নেতারা বলেছেন, আদালতে যে কোনও নাগরিক যেতে পারে। আদালতে যেতে কাউকে বাধা দেওয়া বা নিষেধ করা যায় না।

প্রসঙ্গত, বারাণসী আদালতের নির্দেশে গত বছর জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে জরিপের সময় একটি পাথরখণ্ড উদ্ধার হয়। সেটি পাওয়া যায় অজুখানা অর্থাৎ নমাজ পড়ার আগে মুসলিমরা যেখানে হাত-পা ধুয়ে থাকেন সেই জলাশয়ের মধ্যে। হিন্দুপক্ষের দাবি সেটি কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের মূল শিবলিঙ্গ। তারপরই সেটির কার্বন ডেটিং অর্থাৎ বয়স নির্ধারণের দাবিতে নতুন মামলা হয়।

বারাণসীর জেলা আদালত প্রথমে সেই দাবি মানেনি। পরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট হিন্দু পক্ষের দাবিতে সায় দেয়। যা খারিজ করে দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। কিন্তু শুক্রবার বারাণসীর আদালত ওই পাথরখণ্ড, যা অনেক ভক্ত এবং হিন্দুপক্ষের মতে শিবলিঙ্গ, সেটি বাদে মজজিদের বাকি অংশে কার্বন ডেটিংয়ের অনুমতি দিয়েছে।

হিন্দুপক্ষের আবেদনকারী বিষ্ণু শঙ্কর জৈনের বক্তব্য, একমাত্র কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমেই বারাণসীর কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও জ্ঞানবাপী মসজিদ বিবাদের নিষ্পত্তি সম্ভব। হিন্দুপক্ষের দাবি, মন্দিরের একাংশ ভেঙে মসজিদ তৈরি হয়েছিল।

কার্বন ডেটিং আসলে জৈব পদ্ধতিতে প্রাচীন বস্তুর বয়স নির্ধারণের বহুল প্রচলিত ব্যবস্থা। প্রাণী ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকা পর্যন্ত কার্বন গ্রহণ ও বর্জন করে। মৃত্যুর পর সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার কার্বনের পরিমান এক জায়গায় থেমে থাকে। তেজষ্ক্রিয় পদ্ধতিতে সেই কার্বন বিশ্লেষণ করে বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘিরে গত দেড়-দু বছরে একাধিক মামলা হয়েছে। তার অন্যতম হল পুরো চত্ত্বর জুড়ে জরিপের দাবি। সেই সংক্রান্ত মামলায় এক দফা জরিপের সময় একটি পাথরখণ্ড উদ্ধার হওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক নতুন দিকে মোড় নেয়। হিন্দু পক্ষের দাবি ওই পাথরখণ্ড আসলে শিবলিঙ্গ। সেটির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার আর্জি মঞ্জুর করেনি সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে স্পর্শকাতর বিষয়ে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অনুচিত।

মূল মামলাটি বারাণসীর‌ জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্ত্বরে থাকা শৃঙ্গার গৌরী মূর্তির পূজাপাঠের অনুমতি সংক্রান্ত। সারা বছর ওই মূর্তি পূজো করার অনুমতি চেয়ে ২০২১-এ বারাণসীর আদালতের দ্বারস্থ হন পাঁচ মহিলা।

সেই মামলায় এতদিন মসজিদ চত্ত্বর থেকে উদ্ধার হওয়া পাথরখণ্ড শিবলিঙ্গ কিনা তা নিয়ে শুনানি চলছিল। ওই পাথরখণ্ড নিয়ে এ বছর ২২ মে আরকিওলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া-র রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল। তার আগে পুরো মসজিদ চত্ত্বর জরিপের দাবি জানিয়ে হওয়া মামলা আদালত গ্রহণ করায় গোটা বিতর্ক অন্য দিকে মোড় নেয়।