বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতারা বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুককে বলেছেন, বর্তমান সরকার ভোট কারচুপির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বিকেলে রাজধানী ঢাকার গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকে এসব কথা বলেন দলের নেতারা।
সারাহ কুবের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “নির্বাচনের ৬ মাস বাকি থাকলেও ভোট চুরির ষড়যন্ত্র চলছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ভোট চুরির পরিকল্পনা নস্যাৎ করার একমাত্র উপায় একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। এই আলোচনা এখন সর্বত্র চলছে এবং এটি আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের আলোচনায় এসেছে”।
গত সপ্তাহের রাজনৈতিক অগ্রগতি ও প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তাদের দলের একজন নেতা নিহত হয়েছেন। অনেকে আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিসি, ইউএনও ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি ও নতুন পদায়ন করা হয়েছে। “এগুলো সবই নির্বাচনে ভোট চুরির পরিকল্পনার অংশ”।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ ও সংস্থার উদ্বেগ রয়েছে যে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকায় ব্যাপক দুর্নীতির মধ্যে মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং জনজীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের একমাত্র উপায় হলো একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলোরও এমনটাই প্রত্যাশা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে কি না—তা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে। যার মাধ্যমে জনগণ তাদের সংসদ ও সরকার নির্বাচন করবে। “ব্রিটিশ সরকারেরও সবসময় এই উদ্বেগ ছিল কারণ আমরা ওয়েস্টমিনস্টারকে অনুসরণ করি। বৈঠকে সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে”।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির দাবিকে যুক্তরাজ্য সমর্থন করে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু গ্রেট ব্রিটেন নয়, আরও অনেক দেশ এতে সমর্থন দিচ্ছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “কেন গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে? তারা কী বার্তা পাঠাচ্ছে? কেন তারা একটি প্রতিনিধিত্বমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছেন? তারা কি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে যাচ্ছেন?”
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এসব প্রশ্ন উঠত না এবং যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসব বিষয়ে আলোচনা করতে আসতেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, তাদের ভোটাধিকার, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা সমান সুযোগ ও জীবনের নিরাপত্তা চায়। “এগুলো শুধু বিএনপির দাবি নয়, এ দেশের কোটি মানুষের দাবি”।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে যান। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট বৈঠক করেন সারাহ কুক।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির শর্ত অসাংবিধানিক—সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপি যে শর্ত দিয়েছে, তা সংবিধানবিরোধী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা দলটির এক দফা নিয়ে বিদেশিদের কোনো বক্তব্য নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে সাক্ষাতের পর দুপুরে রাজধানী ঢাকার বনানীতে সেতুভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের জানান, সারাহ কুকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব, বিরোধী দলের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করার পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক করার কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, বিএনপি অশান্তির পথে হাঁটছে, সহিংসতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তারা সন্ত্রাস ও নির্বাচন বানচালের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আমাদের পরিষ্কার কথা, আওয়ামী লীগের দফা একটাই—সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। বিএনপির দাবি অদ্ভুত, উদ্ভট ও অযৌক্তিক। বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি দেবে এমন নিশ্চয়তা না পেলে তারা নির্বাচনে আসবে না। এটা তাদের প্রতিজ্ঞা, পণ।