ভারতে বিজেপি বিরোধী ২৬টি দলের নয়া জোটের নাম মঙ্গলবারের বেঙ্গালুরুতে বৈঠকের পর রাখা হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুর বৈঠক শেষে ঘোষণা করেন, ২৬ দল সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বৈঠকের একদিন পর সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে ‘ইন্ডিয়া’ নামে আপত্তি ছিল জোটের শরিক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারের।
লক্ষণীয় বিহারের পাটনায় বিরোধীদের প্রথম বৈঠকের আয়োজক নীতীশকে বেঙ্গালুরুর দ্বিতীয় বৈঠকে খুব একটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে নীতীশ শিবিরের অভিযোগ। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, অসন্তোষের কারণ নীতীশই বিরোধী দলগুলিকে একজোট করেছেন। অথচ, বেঙ্গালুরুর বৈঠকে কংগ্রেস বেশির ভাগ আলোচনা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
'ইন্ডিয়া' নামটি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর তৈরি। তাতে সায় দিয়েছেন মমতা। এমনকী বৈঠকে তিনিই নামটি পেশ করেন। কিন্তু নীতীশ কুমার আপত্তি তোলেন এই নামে।
তাঁর বক্তব্য, "এত কঠিন কঠিন বিষয় ভোটের লড়াইয়ে মানুষের হজম হবে না। মানুষকে জোটের উদ্দেশ্য বোঝানোই কঠিন হবে। জোটের নাম হতে হবে দুই থেকে তিন শব্দের।" নীতীশ এমন কথাও বলেন, "ইন্ডিয়া নাম রাখা হবে ধরে নিয়ে শব্দ চয়ন করা হয়েছে। আমাদের উচিৎ বিরোধীদের বিকল্প রাজনীতি মানুষের কাছে বোধগম্য হয় এমন নাম রাখা।"
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, লক্ষণীয় ছিল, নীতীশ মঙ্গলবার যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে হাজির থাকলেও এক প্রান্তে বসেছিলেন। টিভি ক্যামেরায় তাঁকে দেখা যায়নি।
সংবাদ সূত্রে খবর, নীতীশের 'ইন্ডিয়া' নাম নিয়ে বক্তব্যে সায় দিয়েছিলেন, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, আরএসপি-র এনকে প্রেমচন্দ্রণ প্রমুখ। তাঁরাও বলেছিলেন, সহজবোধ্য নাম হওয়া দরকার জোটের। আরজেডি সূ্ত্রের খবর, লালুপ্রসাদ, তেজস্বী যাদবেরাও জেডিইউ নেতার সঙ্গে একমত ছিলেন। কিন্তু লালুপ্রসাদ যাদব জোটের স্বার্থে সেখানে মুখ খোলেননি। তাছাড়া, রাহুল ও মমতা, দু’জনেই তাঁর অত্যন্ত পছন্দের মানুষ।
শিবসেনার নেতা উদ্ধব ঠাকরে ইংরিজি নামেই আপত্তি তুলেছিলেন। তিনি বলেন, হিন্দি নাম রাখা হোক। কিন্তু রাহুল-মমতার প্রস্তাবই বহাল থাকে। কলকাতায় আরএসপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, "জোটের নাম সহজ হওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। ইন্ডিয়া-র প্রতিটি শব্দ ধরে ধরে মানুষকে বোঝানো সমস্যা হবে। তবে নাম যখন গৃহীত হয়ে গিয়েছে তখন এ নিয়ে আর ভেবে লাভ নেই।"
সূত্রের খবর, জোটের নাম সেভ ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স, সেকুলার ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্স, ইন্ডিয়ান পিপলস ফ্রন্ট ইত্যাদি রাখার প্রস্তাব দেন অন্য নেতারা। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ভারত জোড়ো অ্যালায়েন্স নাম রাখার প্রস্তাব দেন।
ইন্ডিয়ার ‘ডি’-তে ‘ডেভেলমপেন্টাল’ নাকি ‘ডেমোক্র্যাসি’ রাখা হবে তা নিয়েও জোর বিতর্ক হয়। এই ব্যাপারেও নীতীশের বক্তব্য ছিল, "ডেমোক্র্যাসি বা গণতন্ত্র অনেক বেশি রাজনৈতিক শব্দ এবং মোদী জমানায় সেটাই সবচেয়ে বিপন্ন।" কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী অনেক ভাবনাচিন্তা করেই ‘ডেমোক্র্যাসি’ শব্দটি জোটের নামে রাখতে চাননি। কারণ, বিজেপি কথায় কথায় জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগ করে থাকে। জরুরি অবস্থা, ইন্দিরার জমানা প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি জোটে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে ধরে নিয়েই রাহুল ‘ডেমোক্র্যাসি’ শব্দটি এড়িয়ে গিয়েছেন।