কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমছে, ফসলহানির আশঙ্কা কৃষকদের

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমছে, ফসলহানির আশঙ্কা কৃষকদের।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমেছে, কমেনি ভোগান্তি। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলাসহ সবক'টি নদীর পানি এখন বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নিম্নাঞ্চলের পানি সরেনি এখনো। এমন পরিস্থিতিতে, ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, “বন্যার কারণে, ১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। নিমজ্জিত ফসলের মধ্যে রয়েছে শাক-সবজি, আউশ ধান, আমন বীজতলা, কলা এবং পাট। শাক-সবজি পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বাকি ফসলের ততটা ক্ষতি হবে না।”

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, আকস্মিক বন্যায় এখন পর্যন্ত ৬৫০টি পুকুরের ১৩০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, বন্যার কারণে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিস জানিয়েছে, চলতি বন্যায় ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হয়েছে ৬১ হাজার ৪৫ জন মানুষ। জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮০টি পরিবারের ৩০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ৩৬৩ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৮ লাখ টাকা ও ২২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার অতিরিক্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নদী-ভাঙন, বিলীন হচ্ছে বসতঘর, আবাদি জমি

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে এখন বর্ষার জোয়ার। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মা তীবে। সদর উপজেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১৩ রশিয়া থেকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের খলিফারচর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা, মসজিদ ও আবাদি জমি। হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি।

ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীরের অনেক বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন কবলিত এই এলাকার মানুষের দাবি ভাঙনরোধে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা হোক।

জানা গেছে, পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গত দুই-তিন বছর আগে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই এ অঞ্চলের মানুষ নদী ভাঙনের আতংকে বসবাস করেন।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, “পদ্মায় ভাঙনটা প্রায় সারা বছরই থাকে। কখনো কম, কখেনো বেশি। এখন, এই যে বর্ষা আসলো এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

ভাঙন আতংকে নারায়ণপুর আদর্শ কলেজ ও নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকা থেকে নদীর দূরত্ব এখন ১ কিলোমিটারের কম।

পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, “দুই মাসের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ পাঁকা তেরো রশিয়া এলাকায় একটু একটু করে ভাঙন চলছিলো। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। এর মধ্যে, বেশ কিছু বাড়ি গ্রাস করেছে পদ্মা।”

ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, “নদী ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি মত বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়েছে । নদী পাড়ের মানুষ এখন ভাঙন আতংকে দিন পার করছে। কেউ কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত শ’খানেক ঘরবড়ি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, “কয়েক বছর থেকে এই এলাকা ভাঙছে। বর্তমানে নদীতে পানি বাড়ছে, ভাঙন তীব্র হয়েছে।” তিনি জানান, “ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হয়েছে। এখনো কাজ করার অনুমতি পাওয়া যায়নি। প্রকল্প অনুমোদন হলে ও অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।”