ভারতের মহাকাশ গবেষণায় উজ্জ্বলতম দিন: সফল উৎক্ষেপণ চন্দ্রযান-৩-এর, পৃথিবীর মাটি ছাড়াল রকেট 'বাহুবলী'

ভারতের মহাকাশ গবেষণায় উজ্জ্বলতম দিন: সফল উৎক্ষেপণ চন্দ্রযান-৩-এর, পৃথিবীর মাটি ছাড়াল রকেট 'বাহুবলী'

ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে উজ্জ্বলতম দিন হয়ে রইল ১৪ জুলাই ২০২৩। শুক্রবার, ১৪ জুলাই সবুজ সঙ্কেত পেতেই পৃথিবীর মাটি ছাড়াল বাহুবলী রকেট। চাঁদের দিকে উড়ে গেল চন্দ্রযান-৩।

কাউন্টডাউন শেষ হতেই উড়ে গেল চন্দ্রযান-৩। ২০১৯-এর ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে এবার পাড়ি সফল হওয়ার লক্ষ্যে। শুক্রবার ঠিক কাঁটায় কাঁটায় বেলা ২ টো ৩৫ মিনিটে পৃথিবীর মাটি ছাড়ল ভারতের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র নতুন চন্দ্রযান। বিশালাকৃতি জিএসএলভি রকেটে চেপে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চাঁদের দিকে উড়ে গেল চন্দ্রযান ৩।

ইসরো-র এই চন্দ্রযাত্রার কেন্দ্রে রয়েছে এলভিএম-৩ রকেট। যা চন্দ্রযানটিকে শক্তি জোগাবে এবং পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দেবে। এর আগে বহুবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে এলভিএম-৩ রকেট ব্যবহার করা হয়েছে। একে ভারতীয় রকেটের ‘বাহুবলী’ বলা হয়।

রকেটটি লম্বায় প্রয় ৪৩.৫ মিটার। উচ্চতায় দিল্লির কুতুব মিনারের অর্ধেক। রকেটে দু’টি স্তরে কঠিন জ্বালানি এবং একটি স্তরে তরল জ্বালানি রয়েছে। উৎক্ষেপণের ১০৮ সেকেন্ডের মধ্যে জ্বলতে শুরু করবে তরল জ্বালানি।

সব ঠিক থাকলে ৪০ দিন ধরে মহাকাশে পাড়ি দিয়ে চাঁদে পৌঁছবে চন্দ্রযান। চাঁদের দক্ষিণ পিঠে নামতে পারে ২৩ অগস্ট।

ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র তৈরি ‘জিও-সিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (জিএসএলভি)-মার্ক-৩ চাঁদের মাটিতে যাতে সফল ভাবে সফ্‌ট ল্যান্ডিং করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-কে চাঁদের পিঠে নামাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর চন্দ্রযান-২ মহাকাশযান। সেই অভিযানে পাঠানো অরবিটরটি এখনও চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। চন্দ্রযান-২ অভিযানের তিনটি অংশ ছিল, অরবিটার (যা কক্ষপথে পাক খায়), ল্যান্ডার (যা মাটিতে অবতরণ করে এবং এক জায়গায় থিতু হয়) এবং রোভার (যন্ত্রচালিত গাড়ি)। সূত্রের খবর, চন্দ্রযান-৩ (chandrayaan-3) অভিযানে অরবিটার থাকছে না। শুধু ল্যান্ডার এবং রোভার থাকবে। এবারের ল্যান্ডার বিক্রম গতবারের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত।

বিক্রমের পা অনেক বেশি মজবুত করা হয়েছে যাতে ল্যান্ডিংয়ের সময় যে ধাক্কা লাগবে তার বেগ সহজেই সইতে পারে। ল্যান্ডিংয়ের বেগ প্রতি সেকেন্ডে দু’মিটার থেকে বাড়িয়ে তিন মিটার করা হয়েছে। অর্থাৎ বেশি বেগে অবতরণের সময়ও ল্যান্ডারের ‘পা’ ভাঙবে না। এবারের প্রযুক্তিতে বিকল্প উপায়ও রাখা হয়েছে। ইসরো-র বিজ্ঞানীরা বলছেন, ল্যান্ডিংয়ের সময় বেগ সেকেন্ডে ২ মিটার হল সঠিক। এর চেয়ে বেশি সেকেন্ডে ৩ মিটার বেগ হলেও বিক্রম সেই ধাক্কা নিতে পারবে। গতবারের মতো গতিবেগ বেড়ে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে না। রোভারও অনেক উন্নত। এতে থাকছে আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ।

এবার চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করার জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে, সেটার পরিধি আগেরবারের থেকে বেশি রাখা হয়েছে। গতবার চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-র কাছে মাত্র ৫০০ মিটারX৫০০ মিটার জায়গা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটারX২.৪ কিলোমিটার করা হয়েছে।

দুই রকম মডিউল থাকছে–প্রপালসন মডিউল যা ল্যান্ডারকে লঞ্চিং স্টেশন থেকে লুনার অরবিটে (চাঁদের কক্ষপথ) নিয়ে যাবে এবং ল্যান্ডার মডিউল যাতে রোভার ল্যান্ডারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসবে। ল্যান্ডারের ওজন ১৭৫২ কেজি, রোভারের ২৫ কেজি। প্রোপালসন মডিউলের ওজন ২১৪৮ কেজি। মোট ওজন ৩৯০০ কেজি।