উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরের উপদ্রুত এলাকায় প্রাণঘাতী হামলা আটকাতে পুলিশের গাড়িতেও তল্লাশির নির্দেশ প্রশাসনের

উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরের উপদ্রুত এলাকায় প্রাণঘাতী হামলা আটকাতে পুলিশের গাড়িতেও তল্লাশির নির্দেশ প্রশাসনের

উত্তর-পূর্ব ভারতের জনজাতি দাঙ্গায় বিধ্বস্ত মণিপুরের উপদ্রুত এলাকায় এবার পুলিশের গাড়িও রাস্তায় দাঁড় করিয়ে তল্লাশির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে থাকা পুলিশকর্মীদের পরিচয়পত্রও ভাল করে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে বিভিন্ন চেক পোস্টে ডিউটিরত যৌথবাহিনীর জওয়ানদের।

রাজ্য প্রশাসন কেন এমন নির্দেশ জারি করার কারণ হল রাজ্যের বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রামবাসীরা জানায় হামলাকারীরা মণিপুর পুলিশের কমান্ডো ফোর্সের কালো রঙের পোশাক পরা ছিল। সেখানে কর্মরত ইন্ডিয়া রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের পোশাকও প্রায় একই রঙের।

পুলিশ গ্রামবাসীদের বক্তব্যের সপক্ষে কোনও প্রমাণ খুঁজে পাচ্ছিল না। নজরে রাখা হয়েছিল ছুটিতে থাকা এবং গোলমালের পর কাজে যোগদান না করা পুলিশ কর্মীদের উপর। দিন দুই হল দুটি ভিডিও পুলিশের হাতে আসে। তাতে দেখা যাচ্ছে হামলাকারীরা পুরোদস্তুর মণিপুর পুলিশের কমান্ডোদের পোশাক বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করছে। ওই পোশাক পরে তারা গ্রামে অবাধে ঢুকে পড়ছে। তারপর সুযোগ মতো গ্রামবাসীদের আক্রমণ করে, তাঁদের হত্যা করে পালিয়ে যাচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বিবদমান কুকি এবং মেইতেই দুই সম্প্রদায়ের এলাকাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। মনে করা হচ্ছে প্রশাসন উপদ্রুত এলাকাগুলি নিরাপত্তার জালে মুড়ে ফেলাতেই দুষ্কৃতীরা পুলিশের পোশাক পরে হামলা চালাচ্ছে। সেই কারণে সমস্ত চেক পোস্টকে বলা হয়েছে পুলিশের গাড়ি থামিয়ে সেগুলি ভালো করে তল্লাশি করতে। পুলিশ কর্মীদের পরিচয় যাচাই করে নিতে। প্রয়োজনে কন্ট্রোল রুম থেকে যাচাই করে নিতে গাড়ির নম্বর, পুলিশ কর্মীদের নাম-পরিচয়।

মণিপুরে হিংসা মোকাবিলায় আরও একটি সমস্যা হয়েছে হাজার হাজার বাঙ্কার নিয়ে। অশান্ত এলাকার প্রায় সব গ্রামেই চারপাশে গ্রামবাসীরা বাঙ্কার তৈরি করেছেন। সেখানেই গা ঢাকা দিয়ে আছে জঙ্গিরা। গ্রামবাসীরাই তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। অ্যাকশন করে ফিরে আসার পর গ্রামে যাতে যৌথবাহিনী তল্লাশি চালাতে না পারে সে জন্য মহিলারা মানব প্রাচীর গড়ে তুলছে। নয়া বিপদ হয়েছে পুলিশের কমান্ডো ও ইন্ডিয়া রিজার্ভ পুলিশের জওয়ানদের পোশাক পরে জঙ্গি হামলার ঘটনা।

এদিকে, মণিপুরের ৪৫ হাজার পুলিশ কর্মীর প্রায় দেড় হাজার জন গোলমাল শুরুর পর থেকে নিখোঁজ। তাঁদের মধ্যে কুকি ও মেইতেই দুই সম্প্রদায়ের মানুষই আছেন। গোলমাল শুরুর পর পার্বত্য মণিপুরে কর্মরত মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত পুলিশ কর্মীরা কর্মস্থল ছেড়ে ইম্ফল উপত্যকায় নেমে আসেন। অন্যদিকে, কুকি জনগোষ্ঠীর পুলিশ কর্মীরা ইম্ফল উপত্যকা ছেড়ে চলে যান পার্বত্য এলাকায়। রাজ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ তাদের বারে বারে কাজে যোগ দিতে বলা সত্ত্বেও অনেকেই তা উপেক্ষা করছেন।

রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব সিং একাধিক জেলা ঘুরে এই ব্যাপারে পুলিশ কর্মীদের সতর্ক করেছেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় বেতন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। কাজে যোগ না দেওয়া পুলিশ কর্মীদের পরিজনের বক্তব্য, প্রাণের ভয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন এই পুলিশ কর্মীরা।