রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চর্মরোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব—জরুরি সেবার আহ্বান এমএসএফের

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চর্মরোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব।

বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার শরণার্থী শিবিরগুলোতে চর্মরোগের ব্যাপক পাদুর্ভাব হয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সংখ্যা প্রায় ১ লাখ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স বা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)। সংস্থাটি চর্মরোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের জরুরি সেবার দাবি জানিয়েছে।

এমএসএফ বলছে, এই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপকহারে দ্রুত সেবা দিতে হবে। ক্যাম্পের মধ্যে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির উন্নতি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু রোহিঙ্গা শিবিরে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব ৭০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

চর্মরোগের চিকিৎসা সহজ। এর চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে রোগীর ত্বকে ওষুধ প্রয়োগ এবং কাপড় ও বাসস্থানের পরিবেশ উন্নত করা। যাতে সংক্রমণের কারণ হওয়া পরজীবী নির্মূল হয়। আক্রান্তদের চিকিৎসা না করা হলে তাদের গুরুতর শারীরিক এবং মানসিক প্রভাব হতে পারে।

তবে এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলোই যথেষ্ট হবে না এবং প্রাদুর্ভাবের উৎস মোকাবিলা করা দরকার বলে সতর্ক করেছে এমএসএফ।

বাংলাদেশে এমএসএফের মিশনের প্রধান কার্স্টেন নোকো বলেন, “বর্তমান প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করার জন্য ক্যাম্পের মধ্যে ওষুধের ব্যাপক বন্টন নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, শুধুমাত্র ওষুধই পুনঃসংক্রমণ রোধ করবে না, যদি তারা প্রাদুর্ভাবের কারণ হওয়া অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ব্যবস্থা না করে”।

এমএসএফ দলগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যাম্পে চর্মরোগের ক্রমবর্ধমানসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে তারা চর্মরোগীদের অস্বাভাবিকভাবে বেশিসংখ্যক দেখতে শুরু করে। তারপর থেকে সংখ্যাটি দ্রুত বেড়েছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ক্যাম্পে এমএসএফ দলগুলো প্রায় ৭০ হাজার রোগীকে চর্মরোগের চিকিৎসা দিয়েছে। যা ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এমএসএফ বাংলাদেশের ডেপুটি মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর ডা. পঙ্কজ পাল বলেন, “কিছুদিন আগে আমরা রোগীর শীর্ষে পৌঁছেছি। এই মুহুর্তে, আমরা চর্মরোগ নিয়ে আসা প্রত্যেকের চিকিৎসা করতে পারছি না, আমাদের সেই ক্ষমতা নেই”।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী আজমত উল্লাহ বলেন, “আমার চার বছর বয়সী ছেলের গত ডিসেম্বর থেকে খোস-পাঁচড়া হয়েছে। প্রথমে তার হাতে, তারপরে সারা শরীরে ফুসকুড়ি হতে শুরু করে। আমরা ডাক্তার এবং ফার্মেসিতে টাকা খরচ করেছি। শেষ পর্যন্ত সে ভালো হয়েছে। কিন্তু খুব দ্রুত সে চর্মরোগে আবারও সংক্রমিত হয়েছিল। সে খুব বেশি ঘুমায় না, তার সারা শরীর চুলকায়, বিশেষ করে রাতে। ব্যথায় সে অনেক কান্নাকাটি করে। আমার অন্য দুই ছেলেরও চর্মরোগ আছে এবং আমার স্ত্রী এবং আমারও লক্ষণ রয়েছে। এটা আমার পরিবারের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে”।

বাংলাদেশে মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ার্স গত বছর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পানি ও স্যানিটেশন পরিস্থিতির ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। তাদের সমীক্ষা অনুয়ায়ী, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। তারা বলছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি সঠিক স্যানিটেশনের অভাব এবং পানির প্রাপ্যতান ঘাটতি রয়েছে। যদিও আমরা গত দুই বছরে যথেষ্ট পরিমাণে পানি ও স্যানিটেশন পরিকাঠামোর উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। তবে রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি রয়েছে।

নোকো বলেন, “ক্যাম্পে অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন প্রতিক্রিয়া কাজ করছে না। এটি রোহিঙ্গা সম্প্রদায় এবং কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের সুস্থতার জন্য আরও হুমকি ও ঝুঁকি তৈরি করছে”।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাদ্য নির্দিষ্ট হারে কমানোসহ তহবিল হ্রাসের প্রেক্ষাপটে চর্মরোগের এই প্রাদুর্ভাব ঘটছে। তহবিল হ্রাসের আগেও, শিবিরের মধ্যে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর দেওয়া পরিষেবার স্তর শরণার্থীদের চাহিদা পূরণ করেনি।