বাংলাদেশের সরকার বিরোধী প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে এক দফা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের পদযাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখা আয়োজিত এক সমাবেশে ফখরুল এ ঘোষণা দেন।
১৮ জুলাই এক দফা দাবি আদায়ে সারা দেশের সকল মহানগর ও জেলায় পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে এবং একই দিন ঢাকায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত একই কর্মসূচি পালিত হবে।
১৯ জুলাই সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
সমাবেশে যোগ দিতে বুধবার সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলের ডাকে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী ভিড় করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়াপল্টন এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পৃথক নোটিশ জারি করে বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের অদূরে ‘শান্তি সমাবেশ’ করার অনুমতি দেয়।
বিকেল ৫টার মধ্যে কর্মসূচি শেষ করাসহ ২৩টি শর্তে দুই দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
বিএনপি ছাড়াও আরও ৩৬টি সমমনা রাজনৈতিক দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।
৬ দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরে এক সভা করে বিএনপির এক দফা আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়।
একই দাবিতে বিজয়নগরে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, তেজগাঁওয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও গণফোরাম, মতিঝিলে পিপলস পার্টি ও নয়াপল্টনে লেবার পার্টি দিনের বিভিন্ন সময় একই ঘোষণা দেয়।
এ ছাড়া, গণ অধিকার পরিষদের দুটি বিভক্ত গ্রুপ (একটির নেতৃত্বে রেজা কিবরিয়া ও অন্যটির নেতৃত্বে নুরুল হক নুর), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে এক দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়।
এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে এক জনসভায় সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরসহ ১০ দফা দাবির ঘোষণা করে বিএনপি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ১০ দফা আন্দোলনের ঘোষণার পর থেকে গত সাত মাসে সারাদেশে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, রোডমার্চ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়া গত আগস্ট থেকে তারা বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে।
শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচন হবে না—ওবায়দুল কাদের
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। “আমাদের এক দফা দাবি, তা হলো শেখ হাসিনার অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন। যেখানে বিএনপির এক দফা দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আমাদের দাবি উল্টো”।
রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর শাখা আয়োজিত যৌথ শান্তি সমাবেশ।
রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত যৌথ শান্তি সমাবেশে বিএনপির এক দফা সরকার পতনের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপির এক দফা দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। শেখ হাসিনাকে ছাড়া আমাদের নির্বাচন হবে না। বিএনপি জানে তারা নির্বাচনে হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার মুখে তারা ভেসে যাবে। তারা শেখ হাসিনাকে হিংসা করে”।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, তাদের এক দফা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন এবং এই লক্ষ্য অর্জনে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।