ভারতে বর্তমানে ঋতুস্রাব ও মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সার্বিক স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এই কাজে এগিয়ে এসেছে দিল্লি আইআইটি।
পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড ভারতে আগেও তৈরি হয়েছে। কলা পাতা বা চট দিয়ে প্যাচ বানিয়েছেন গবেষকরা। কিন্তু সিন্থেটিক পলিমার দিয়ে পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি ন্যাপকিন আগে তৈরি হয়নি। এই ধরনের প্যাডের বৈশিষ্ট্য হল ব্যবহারের পরে ফেলে দিলে তা পরিবেশে দূষণ ছড়ায় না। পলিমার সবটুকু শোষণ করে নেয়। দিল্লি আইআইটি-র দুই গবেষক ডা. সবপ্যাথি এস এবং অধ্যাপক অনুপ কে ঘোষ সিন্থেটিক পলিমার দিয়ে প্রথমবার পরিবেশবান্ধ প্যাড তৈরি করলেন। এই প্যাডের নাম সেলিগো বায়োস্যাপ।
ডা. সবপ্যাথি, সেলিগো ন্যাচরাল ফাইবারস সংস্থার কর্ণধার। তিনি জানিয়েছেন, "স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করে রাস্তাঘাটে, আবর্জনা স্তূপে ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে দূষণ ছড়ায় পরিবেশে। বছরে অন্তত ১৩ হাজার টন ব্যবহার করা স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবেশে মিশছে। এই দূষণ রোখার জন্যই পরিবেশবান্ধব প্যাড তৈরি করা হয়েছে।"
পলিমার দিয়ে পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাড বানালেন ভারতের দিল্লি আইআইটি-র দুই বিজ্ঞানী।
এই প্যাড দেখতে অনেকটা রোল করা টয়লেট পেপারের মতো। যতখুশি ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া যায়। এর সিন্থেটিক সুপার অ্যাবজরবেন্ট পলিমার প্যাডের দূষিত রক্ত খুব দ্রুত শোষণ করে নিতে পারে। ফলে পরিবেশে সেই ব্যবহার করা প্যাড ফেললেও তার থেকে দূষণ ছড়াবে না। গবেষকদের দাবি, এই ধরনের স্যানিটারি প্যাড স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল। অন্যান্য প্যাডের রাসায়নিক অনেক সময় ত্বকের ক্ষতি করে, কিন্তু সেলিগো বায়োস্যাপ স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনওই ত্বকের ক্ষতি করবে না।
গবেষকরা বলছেন, সেলিগো বায়োস্যাপ বায়োডিগ্রেডেবল প্যাড। বাজারচলতি স্যানিটারি প্যাডের অধিকাংশই তৈরি হয় নন-বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক দিয়ে। ফলে এক একটি ব্যবহার করা প্যাড মাটিতে মিশে যেতে ৫০০-৮০০ বছর লেগে যায়। হিসেব করলে দেখা যাবে, এক একজন মহিলা তাঁর ঋতুচক্রে মোট ১২৫ কেজি নন-বায়োডিগ্রেডেবল বর্জ্য জমা করেন। সেই হিসেবে ভারতের অন্তত সাড়ে ৩৫ কোটি মহিলা কতটা জৈবিক বর্জ্য জমা করছেন, সেই সংখ্যাটা আকাশছোঁয়া। কাজেই দূষণ ও রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে পাল্লা দিয়েই। কিন্তু সেলিগো বায়োস্যাপে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় না। এতে থাকে সিন্থেটিক পলিমার।
বাজারচলতি প্যাডের উপরে থাকে হাইড্রোফোবিক সিট যা পলিপ্রপিলিন (প্লাস্টিক উপাদান) দিয়ে তৈরি হয়। এই সিট বেশিক্ষণ শরীরে সংস্পর্শে থাকলে র্যাশ, চুলকানির মতো ত্বকের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বায়োডিগ্রেডেবল সেলিগো বায়োস্যাপ স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হবে না বলেই দাবি গবেষকদের।
ঋতুকালীন সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, পিরিয়ড নিয়ে সচেতনতার অভাব, লজ্জা-সঙ্কোচ, নানারকম অন্ধবিশ্বাস যখন চেপে বসে থাকে তখন সে পরিস্থিতিকে 'পিরিয়ড পভার্টি' বলে। ভারত শুধু নয়, বিশ্বের অনেক দেশই এখনও পিরিয়ড পভার্টি-র শিকার। ভারতের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও মহিলারা স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার শেখেননি। ঋতুকালীন সময়ে ভরসা এক টুকরো কাপড় বা কোনও অস্বাস্থ্যকর দ্রব্য। ঋতুস্রাব নিয়ে এখনও কথা বলতে সঙ্কোচ করেন সেসব এলাকার মহিলারা। কিশোরী মেয়েরাও ঋতুকালীন সময় পরিচ্ছন্নতা মেনে না চলায় নানা রকম রোগের শিকার হয়। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশবান্ধব এই নতুন স্যানিটারি প্যাড সহজলভ্য হলে ভারতের বহু মহিলা উপকার পাবেন বলে মনে করছেন গবেষকরা।