ভারতে বিজেপি-র অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সমর্থন করল অরবিন্দ কেজরিওয়াল-এর দল আপ

ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল

ভারতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার পক্ষে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার ২৭ জুন এই ব্যাপারে সরকারের অভিমত স্পষ্ট করার পর বিভিন্ন দল ও সংগঠন তাদের প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছে।

প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম বুধবার ২৮ জুন বলেন, "দেশ ও পরিবার এক নয়। ব্যক্তিগত আইনে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না।" তবে চিদাম্বরমের বক্তব্য কংগ্রেসের দলগত অবস্থান কিনা তা স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে বাকি দলগুলির মধ্যে আম আদমি পার্টি বুধবার সরকারি ভাবে এই ব্যাপারে দলের অবস্থান জানিয়েছে। আপ-এর সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) তথা রাজ্যসভার সদস্য সন্দীপ পাঠক বুধবার বলেন, "আপ দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর পক্ষে।"

এদিকে, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বুধবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বৈঠক করে। আইন কমিশন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আগামী মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব মহলকে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছে। পার্সোনাল ল বোর্ড ঠিক করেছে তারা এই ব্যাপারে জনমত সমীক্ষা করে আইন কমিশনকে রিপোর্ট দেবে।

এদিকে আপ-এর অবস্থান নিয়ে বিরোধী শিবিরে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার সাংবিধানিক বিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেও আপ সমর্থন জানিয়েছিল। বিরোধী দলগুলির মধ্যে একমাত্র দিল্লি ও পাঞ্জাবের শাসক দলই ওই ইস্যুতে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ায়। যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য বাকি দলগুলিও ওই ব্যাপারে তীব্র ভাষায় কেন্দ্রের বিরোধিতার পথেও হাঁটেনি।

বিশেষজ্ঞদের মত, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আপের অবস্থানের ফলে বিরোধী জোটে যেমন ফাটল চওড়া হল, তেমনই জোরদার হল কংগ্রেসের অবস্থান। গত শুক্রবার ২৩ জুন পাটনায় বিরোধী দলগুলির বৈঠকে দিল্লি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আপ ও কংগ্রেসের মধ্যে তীব্র বিবাদ হয়। অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতার কথা ঘোষণা করার জন্য বৈঠকে কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করে আপ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যৌথ সাংবাদিক বৈঠক বয়কট করেন।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, কংগ্রেস শিবির আসলে কেজরিওয়ালকে বিরোধী জোটে নিতেই আগ্রহী নয়। জম্মু কাশ্মীরের প্রধান দুই দল ন্যাশনাল কনফারেন্সে এবং পিডিপির-ও বিরোধী শিবিরে আপকে নিয়ে আপত্তি আছে। কেজরিওয়ালের দল ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত সমর্থন করায় পাটনার বৈঠকে যোগ দিতে গোড়ায় আপত্তি করেছিল পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের অনুরোধে যোগ দেয় দুই দল।

এবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর সিদ্ধান্ত সমর্থন করায় আপকে নিয়ে কংগ্রেসের অবস্থানই মান্যতা পেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেসের বক্তব্য, আপ-এর সঙ্গে বিজেপির গোপন বোঝাপড়া আছে।

অভিন্ন দেওয়ানি বিধি এক কথায় বলতে গেলে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গোটা দেশে এক আইন বলবৎ করা, যা নিয়ে মুসলিম, খ্রিস্টান-সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা উদ্বিগ্ন। কারণ অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে বিয়ে, বিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, দত্তক ইত্যাদি বেশ কিছু ক্ষেত্রে পৃথক ব্যক্তিগত আইন আর চালু থাকবে না। যেগুলির সঙ্গে ধর্মীয় বিধানও যুক্ত। সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করার নামে হিন্দু শাসন বিধি প্রণয়ন করতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী মোদী মঙ্গলবার মধ্য প্রদেশের ভোপালে বিজেপির কর্মী সভায় এক দেশ এক আইনের পক্ষে সওয়াল করে বলেন, ব্যক্তিগত আইন, আইনের শাসনের পরিপন্থী। একই দেশের নাগরিকদের জন্য কীভাবে একাধিক আইন চালু থাকতে পারে।