ভারতের উত্তর-পূর্বের মণিপুরে জনজাতি দাঙ্গায় এখনও পর্যন্ত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা সাড়ে তিনশোর বেশি। আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। মণিপুর রাজ্যের কুকি সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠনের দাবি, নিহতদের মধ্যে ৭০জনই তাদের সমাজের মানুষ। আহতদেরও সিংহভাগ কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কুকিদের জীবন রক্ষায় ব্যর্থ অভিযোগ করে সংস্থাটির তরফে মঙ্গলবার ২০ জুন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে দাবি করা হয়, অবিলম্বে মণিপুরকে পুরোপুরি সেনার হাতে তুলে দেওয়া হোক। কুকিদের জীবন রক্ষায় এ ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মণিপুর ট্রাইবাল ফোরাম নামে সংস্থাটির তরফে আইনজীবী সুনীল গঞ্জালভেস কাতর আর্জি জানান।
বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ আর্জি ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, এই মামলা দ্রুত শোনার বিষয় নয়। মণিপুরে যা চলছে তা নিছকই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিজনিত সমস্যা। এই ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের দ্রুত মামলা শোনার কোনও প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের জনজাতি দাঙ্গা চলছে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে। দিল্লির যন্তরমন্তরে মেইতেই সম্প্রদায়ের মহিলারা মঙ্গলবার সকাল থেকে ধর্নায় বসেছেন। তাঁরা চান কেন্দ্রীয় সরকার আরও কঠোর হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুক এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ব্যাপারে পদক্ষেপ করুন। মণিপুরে কুকিদের সিংহভাগ হলেন ক্রিশ্চান। অন্যদিকে, মেইতেইদের বেশিরভাগ হিন্দু। পাঙ্গল মুসলিম নামে ছোট জনগোষ্ঠীও মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত।
মণিপুরে গত মে মাসের ৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া জাতি দাঙ্গার মোকাবিলায় সেখানে দ্রুত সেনা মোতায়েন করা হয়। প্রায় ১৪ হাজার সেনা জওয়ান মোতায়েন রয়েছে রাজ্যটিতে। এছাড়া অসম রাইফেলস, মণিপুর পুলিশ ও কমান্ডো ফোর্স এবং একাধিক প্রতিবেশী রাজ্যের পুলিশও সেখানে মোতায়েন করেছে সরকার। শুনানিতে মণিপুর সরকারের হয়ে সেকথা উল্লেখ করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁর যুক্তি একই আর্জি গত ২৭ মে’র শুনানিতেও পেশ করা হয়েছিল। শীর্ষ আদালত আর্জি মঞ্জুর করেনি।
দুই বিচারপতি মামলাটি জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ শোনা হবে বলে উল্লেখ করলে আইনজীবী গঞ্জালভেস বলেন, ততদিনে হয়তো আরও ৫০জন কুকি আদিবাসী খুন হয়ে যাবেন। এত নিরাপত্তা বাহিনী নামিয়েও হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা যায়নি। কুকিরাই মূলত হামলার শিকার। তাই সেনার হাতে পুরো রাজ্য তুলে দিলে হত্যাযজ্ঞে অন্তত লাগাম দেওয়া যাবে।
দুই বিচারপতি শেষ পর্যন্ত ৩ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য স্থির করেছেন। ওই দিন গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষে সুপ্রিম কোর্ট পুরোপুরি চালু হবে। তাৎপর্যপূর্ণ হল কুকিদের বিভিন্ন সংগঠন আগেই রাজ্য পুলিশকে বয়কটের ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি কুকি অধ্যুষিত এলাকায় সেনা অথবা অসম পুলিশকে মোতায়েন করা হোক। অন্যদিকে, উল্টো দাবি মেইতেইদের। তাদের বক্তব্য, রাজ্য পুলিশেই তাদের আস্থা বেশি।