সাংবাদিক রব্বানী হত্যা: পঞ্চগড় থেকে ইউপি চেয়ারম্যান বাবু আটক

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী। (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম এর জামালপুর প্রতিনিধি গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার সন্দেহভাজন ব্যক্তি, জামালপুরের সাধুরপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুকে পঞ্চগড় থেকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শনিবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন থেকে বাবুসহ তিনজনকে আটক করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল হোসেন।

জামাল হোসেনজানান, “সীমান্ত পার হয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর সময় শনিবার (১৭ জুন) ভোর ৫টার দিকে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়ন থেকে বাবুসহ তিনজনকে আটক করে র‍্যাব সদস্যরা।”

এর আগে, গোলাম রব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম অভিযোগ করেন যে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নির্দেশে, তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। মনিরা দাবি করেন, ঘটনার আগে তার স্বামী বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন এবং চেয়ারম্যানের সহযোগীরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন বাড়ি ফেরার পথে গোলাম রব্বানী বকশীগঞ্জ উপজেলায় একদল সন্ত্রাসীর হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা তাকে ব্যাপক প্রহার করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলায় পুলিশের আটক করা ৯ জনকে শনিবার (১৭ জুন) জামালপুরের আদালতে হাজির করা হয়। পরে, পুলিশ তাদের প্রত্যেকের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত আটক ব্যক্তিদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং রিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য রবিবার (১৮ জুন) দিন ধার্য করেন।

বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, “নয় জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। রবিবার রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।” উল্লেখ্য, রব্বানী হত্যার ঘটনায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু-কে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে, ৪৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‌্যাব

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই কর্মকর্তাদের মধ্যে র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত। এতে বলা হয়েছে যে, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।